“বিজ্ঞান দিন দিন যতই উন্নত হচ্ছে, আস্তে আস্তে কুরানের সত্যতা ততই প্রমানিত হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বাধ্য হচ্ছেন কুরানের বাণীকে সত্য হিসেবে মেনে নিতে। কুরানে এমন অনেক বৈজ্ঞানিক তথ্যই দেয়া আছে ১৪০০ বছর আগে থেকে যা বিজ্ঞান রিসেন্টলি জানতে পেরেছে। ফেরাউনের প্রসঙ্গই ধরুন। এইতো মাত্র সেদিন ফ্রান্সের বিজ্ঞানীরা সমুদ্রতলে অক্ষত ফিরাউনের লাশ খুজে পেল, আর এটা কুরানে কত্ত আগে থেকেই আল্লাহ বলে দিয়েছেন। সত্য এভাবেই প্রকাশিত হয়।
কুরানে ফিরাউন সম্পর্কে বলা হয়েছে, “আর বনী-ইসরাঈলকে আমি পার করে দিয়েছি নদী। তারপর তাদের পশ্চাদ্ধাবন করেছে ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনী, দুরাচার ও বাড়াবাড়ির উদ্দেশে। এমনকি যখন তারা ডুবতে আরম্ভ করল, তখন বলল, এবার বিশ্বাস করে নিচ্ছি যে, কোন মাবুদ নেই তাঁকে ছাড়া যাঁর উপর ঈমান এনেছে বনী-ইসরাঈলরা। বস্তুতঃ আমিও তাঁরই অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত। এখন একথা বলছ! অথচ তুমি ইতিপূর্বে না-ফরমানী করছিলে। এবং পথভ্রষ্টদেরই অন্তর্ভুক্ত ছিলে। অতএব আজকের দিনে বাঁচিয়ে দিচ্ছি আমি তোমার দেহকে যাতে তোমার পশ্চাদবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে। আর নিঃসন্দেহে বহু লোক আমার মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না।”[কুরান ১০:৯০-৯২]
মুসা নবী ও তার অনুসারীদের ধাওয়া করার সময় আল্লাহ ফেরাউন ও তার দলবলকে পানিতে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। সেই সাথে আল্লাহ ঘোষনা করেছেন কুরানে এই বলে যে, তিনি ফিরাউনের লাশকে সংরক্ষন করবেন ভবিষ্যত মানুষদের জন্যে নিদর্শন হিসেবে।
কুরানে ঠিক যেভাবে ফিরাউনকে সংরক্ষন করবে বলা হয়েছে, ঠিক সেভাবেই ফিরাউন সাগরের নীচ থেকে অক্ষত অবস্থায় আবিষ্কৃত হলো! মিশরের জাদুঘরে তার লাশ সংরক্ষিত আছে, চাইলে দেখে আসতে পারেন। চাক্ষুস প্রমাণ! আর ফিরাউনের লাশ নিয়ে গবেষণাকারী বিজ্ঞানী দলের প্রধান মরিস বুকাইলি এ ঘটনায় আশ্চর্য হয়ে ইসলাম গ্রহন করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ!"
এতক্ষণ আমরা পড়লাম কুরানে বিজ্ঞান খোঁজার মিশনে লিপ্ত ইসলামী চিন্তাবিদদের বক্তব্য। এবার জানব প্রকৃত তথ্য। ফিরাউনের বিষয়টি আসলে শত শত ইসলামিক মিথ্যাচারের মধ্যে একটি। মিথ্যা মোজেজা সাজিয়ে ইসলামে মানুষকে বিশ্বাস করানো আর ইসলাম প্রচারের চেষ্টা নতুন কিছু নয়। যাহোক, কথা না বাড়িয়ে আমরা জেনে আসি মুসলিমরা ফিরাউন নিয়ে কী কী মিথ্যাচার করেছেন।
✔ ফিরাউন (pharaoh) কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম নয়। প্রাচীন মিশরীয় রাজাদের উপাধি ছিল ফারাও - আরবরা বলতো ফিরাউন। মিশরে ৩৩২ জন রাজা রাজত্ব করেছিলেন, তাদের সবাইকেই ফারাও/ফেরাউন বলা হতো। কুরানে কোনো নির্দিষ্ট ফিরাউনের নাম উল্লেখ করা হয়নি বরং উক্ত কাহিনীতে শুধুমাত্র ফেরাউন উল্লেখ করা হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি অজ্ঞতা। আপনি শুধুমাত্র রাজা/প্রেসিডেন্ট/প্রধানমন্ত্রী বলতে কাকে বুঝবেন?
* মুসলিমরা যে ফেরাউনের লাশকে সাগরের নিচ থেকে আবিষ্কৃত দাবি করে, যে ফেরাউনের লাশকে ফ্রান্সে পাঠানো হয়েছিল ড. মরিস বুকাইলির নেতৃত্বে, সে ফেরাউনটি হচ্ছে দ্বিতীয় রেমেসিস (Ramesses II).
✔ মুসলিমদের দাবি অনুযায়ী, ফিরাউনের লাশ লোহিত সাগরের তলদেশ থেকে আবিষ্কার করা হয়েছে। এটি একটি বড় রকমের মিথ্যাচার। নদী/সাগরের তলদেশ থেকে কোনো মমিই উদ্ধার করা হয়নি। আর দ্বিতীয় রেমেসিসের মমি উদ্ধার করা হয়েছে DB320 নামে একটা সমাধিতে। সেখানে দ্বিতীয় রেমেসিস ছাড়াও আরও ৫০ টি মমি উদ্ধার করা হয় একই সাথে। তবে, দ্বিতীয় রেমেসিসকে প্রথমে kv7 নামে একটা সমাধিতে রাখা হয়েছিল। পরে সেখান থেকে তাকে Pinudjem II এর মমির পাশে DB320 এ স্থানান্তর করা হয়।
✔ ইসলামী দাবি অনুযায়ী, ফিরাউন মুসা নবীকে ধাওয়া করতে গিয়ে পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। অথচ ফিরাউন দ্বিতীয় রেমেসিস মৃত্যুবরণ করেছেন আর্থ্রাইটিস রোগে। এটি বৃদ্ধ বয়সের মানুষদের প্রায়ই হতে দেখা যায়। তাই এটা স্পষ্ট যে, দ্বিতীয় রেমেসিস সাগরে ডুবে মরেননি। কুরানের বক্তব্য ভুল।
✔ বাইবেলে তো মুসা নবী কর্তৃক সাগর দুইভাগ হয়ে যাওয়ার কিচ্ছা-কাহিনী আছেই, তবে বাইবেলে বলা হয়েছে যে, ফেরাউনের লোকজন ডুবে মরেছে, স্বয়ং ফেরাউনের কথা বলা হয়নি। আর নবী মুহাম্মদের সময়কালে প্রাচীন মিশরীয় মমির কথা সকলেরই জানা ছিল। তাই ফেরাউনরা মৃত্যুর পর তাদের লাশ সংরক্ষণ করে রাখে মমি করে, এটা মুহাম্মদ অবশ্যই শুনেছেন। তাই, কুরানে ঐ সাগর দুই ভাগ হওয়ার কিচ্ছা ও লাশ সংরক্ষনের ঘটনা জুড়ে দেয়া নিশ্চয়ই কোনো মোজেজা নয়। কুরান ও বাইবেল লিখিত হওয়ার হাজার বছর আগেই যা ঘটে গেছে, সেই জানা ঘটনার উল্লেখ থাকা কোনো কৃতিত্বের কাজ নয়।
✔ কুরানে আল্লাহ শুধুমাত্র একজন ফেরাউনের লাশ সংরক্ষণ করার কথা বলেছেন ভবিষ্যৎ নিদর্শন/মোজেজা হিসেবে। কিন্তু আমরা দেখি যে, মিশরেই অনেক অনেক মমি অক্ষত অবস্থায় আবিষ্কৃত হয়েছে। মিশর ছাড়াও আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়া অঞ্চলের আরও প্রায় ২০-২৫ টি দেশে মমি আবিষ্কৃত হয়েছে। তো ঐ মমিগুলো কার মোজেজা? ঐ মমিগুলো কে সংরক্ষণ করেছে ভবিষ্যৎ নিদর্শন হিসেবে? আল্লাহর দেখানো মোজেজা অনুযায়ী শুধুমাত্র একটি মমি পাওয়ার কথা ছিল। তাই নয় কি?
✔ এই লাশ সংরক্ষণের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কী? কী পদ্ধতিতে কেমন করে মিশরীয়রা মমি করে লাশ সংরক্ষণ করতো? প্রাচীন মিশরীয়দের বুদ্ধিসুদ্ধি ছিল বেশ ভালোই। তারা প্রথমে লাশের পেট কেটে পচনশীল সকল নারীভুড়ি বের করে ফেলতো, নাক দিয়ে কতিপয় রাসায়নিক দ্রব্যাদি প্রবেশ করিয়ে মগজ অর্ধতরল করে ফেলতো ও লোহার হুক দিয়ে টেনে বের করে আনতো... তারপর ন্যাট্রন লবণ সহ অন্যান্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক লবণের দ্রবণে মাস তিনেক ডুবিয়ে রেখে তুলে আনা হতো। এরপর রোদে শুকানোর পালা... পরিপূর্ণভাবে লাশটা শুকিয়ে গেলে এটাকে ব্যাকটেরিয়া-বিরোধী করে তৈরি করা এক ধরনের ব্যান্ডেজে মুড়িয়ে ফেলা হতো... অবশেষে কাঠের বাক্সে প্যাকিং! বিস্তারিত এই লিঙ্কে দেখুন।
** কাজেই আমার মুসলিম ভাইয়েরা, আপনাদেরকে বলছি: এখন থেকে ইসলামিক মোজেজার নামে মিথ্যাচার করার অভ্যাস পরিত্যাগ করুন। সত্যকে জানার চেষ্টা করুন। অন্ধবিশ্বাসী না হয়ে নিজের বিবেক-বুদ্ধি কাজে লাগান।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন