লিখেছেন আবুল কাশেম
উম হানি এবং নবী মুহাম্মদের মাঝে পরকীয়া প্রেমের বিষয়ে আলোকপাত করা অত্যন্ত জটিল এবং বিপজ্জনক। জটিল এই কারণে যে, উম হানির ব্যাপারে আধুনিক ইসলামী পণ্ডিতেরা কোনো কিছুই জানাতে চান না। কারণ নবীর জীবনের এই অধ্যায় তেমন আনন্দদায়ক নয়। নবীর শিশু-স্ত্রী আয়েশা, পালকপুত্রের স্ত্রী যয়নবের সাথে নবীর বিবাহ, এবং আরও অন্যান্য নারীদের সাথে নবীর যৌন এবং অযৌন সম্পর্কের ব্যাপার আজ আমরা বেশ ভালভাবেই জানতে পারি। তা সম্ভব হয়েছে আন্তর্জালের অবাধ শক্তির জন্যে। আজকাল এই সব নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে এবং আমরা নবীর জীবনের অনেক অপ্রকাশিত অন্ধকার দিকগুলি অবলোকন করতে পারছি। কিন্তু উম হানির সাথে যে নবী আজীবন পরকীয়া প্রেম করে গেছেন—অগনিত স্ত্রী ও যৌনদাসী থাকা সত্ত্বেও—তা নিয়ে আজ পর্যন্ত তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো প্রবন্ধ লেখা হয়নি। উম হানি ছিলেন নবী মুহাম্মদের প্রথম এবং আজীবন প্রেম। ধরা যায়, নবী উম হানিকে মনঃপ্রাণ দিয়ে ভালবাসতেন এবং কোনোদিন এক মুহূর্তের জন্য উম হানিকে ভোলেননি। ইসলামের নির্ভরযোগ্য প্রাচীন ও মৌলিক উৎস ঘেঁটে এই রচনা লেখা হয়েছে, যাতে নবী জীবনের এই উপাখ্যান দীর্ঘ জানা যায়। যেহেতু উম হানির জীবন এবং নবীর সাথে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে কোনো ইসলামী পণ্ডিত ইচ্ছাকৃতভাবেই তেমন মাথা ঘামাননি, তাই অনেক কিছুই অনুমান করে নিতে হয়েছে। জোরালো হাদিস এবং প্রাথমিক জীবনীকারদের থেকে জানা তথ্যই এই অনুমানের ভিত্তি। এই রচনাতে নবী মুহাম্মদের পরকীয়া প্রেমের অনেক প্রশ্নের উত্তর পাঠকেরা হয়ত পাবেন।
এই রচনা লেখা বিপদজনক এই কারণে যে, ইসলামি জিহাদিদের কাছে নবীর জীবনের এই গহীন গোপনীয় ব্যাপার খুবই স্পর্শকাতর। যে লেখকই এই উপাখ্যান লিখবে, সে-ই ইসলামী সন্ত্রাসীদের শিকার হবে, তা বলা বাহুল্য।
উম হানি ও মুহাম্মদের সম্পর্কের সাথে আয়েশা, সওদা, মেরাজ, মক্কা বিজয় ও আরও কিছু প্রসঙ্গ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিছু প্রসঙ্গের পুনরাবৃত্তি করতে হয়েছে — উপায় ছিল না। ইসলামি কিতাবসমূহ যে পুনরাবৃত্তিতে ভরপুর।
নবী মুহাম্মদ জন্মের পূর্বেই তাঁর পিতা আবদুল্লাহকে হারান। ছয় বছর বয়সে নবীর মাতা আমিনাও মারা যান (ইবনে ইসহাক, পৃঃ ৭৪); মুহাম্মদের আট বছর বয়স পর্যন্ত তাঁকে লালনপালন করেন নবীর পিতামহ আবদুল মুত্তালিব। আবদুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পর মুহাম্মদের ভরণ-পোষণের ভার ন্যস্ত হয় চাচা আবু তালেবের ওপর। আবু তালেব নবীকে নিজের সন্তানের মতই লালন পালন করেন আমৃত্যু পর্যন্ত।
আমরা ইতিহাস থেকে আবু তালিব সম্পর্কে যা জানতে পাই, তা হল এই:
আবু তালেব অর্থ হল তালেবের পিতা। আবু তালেবের আপন নাম ছিল আব্দ মানাফ। তালেব ছিল তাঁর জ্যৈষ্ঠ পুত্র। আব্দ মানাফের হয়ত অনেক স্ত্রী ছিল, কিন্তু ইসলামের ইতিহাস ঘেঁটে তাঁর দুই স্ত্রীর নাম পাওয়া যায়। এঁরা হলেন—
ফাতেমা বিন্ত আসাদ। এঁর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন চার পুত্র এবং তিন কন্যা। পুত্ররা হলেন—যথাক্রমে তালিব, আকিল, জাফর এবং আলী। আর কন্যারা হলেন—উম হানি, জুমানা এবং রায়তা (আসমা বিন্ত আবু তালেব) (ইবনে সা’দ, খণ্ড ১, পৃঃ ১৩৫)।
আবু তালেবের অপর স্ত্রীর নাম ছিল ইল্লাহ বা এলাহ্। তাঁর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন এক পুত্র, তুলায়ক। এছাড়াও ইল্লাহ্র আগের স্বামীর ঔরসে জন্ম গ্রহণ করছিল আর এক পুত্র যার নাম ছিল আল হুয়েরেথ বিন আবু দুবাব (ঐ একই সূত্র)।
ইসলামের ইতিহাসে আব্দ মানাফের দুই ছেলে জাফর ও আলী সম্বন্ধে প্রচুর তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু আকিল ও তালেব সম্বদ্ধে তেমন কিছু জানা যায় না। ইবনে সা’দ লিখেছেন তালেবকে বদর যুদ্ধে জোরপূর্বক যুদ্ধ করতে পাঠানো হয়। কিন্তু তালেব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন কি না, তা পরিষ্কার নয়। কারণ বদর যুদ্ধে তাঁর মৃত দেহ কেউ পায়নি, আবার তাঁকে জীবিতও কেউ দেখেনি। ধরা যায়, তালেব বদর যুদ্ধ থেকে পালিয়ে কোথাও চলে যান। এর পর থেকে আর কেউ তার খবর জানে না—তালেব চিরকালের জন্য নিখোঁজ হয়ে গেলেন; তার কোনো উত্তরসূরিও ছিল না (ইবনে সা’দ, খণ্ড-১, পৃঃ ১৩৫)।
আকিলের ব্যাপারেও কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। শুধু এইটুকু জানা যায় যে, যখন নবী ও আলী মদিনায় চলে যান, আর জাফর যখন আবিসিনিয়ায় নির্বাসিত ছিলেন, তখন আকিল আবু তালেবের মৃত্যুর পর সমস্ত পৈত্রিক সম্পত্তি নিজের হাতে নিয়ে নেন। কারণ নবী মুহাম্মদ যখন মক্কা জয় করেন, তখন অনেকেই জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তিনি আবু তালেবের গৃহে যাবেন কি না। উত্তরে মুহাম্মদ বলেছিলেন যে, ঐ গৃহে যাবার তাঁর কোনো ইচ্ছেই নেই—কারণ আকিল তাঁদের জন্য কিছুই রাখেনি। বলা যায় যে, নবী যখন মক্কায় বিজয় পতাকা নিয়ে প্রবেশ করলেন, তখন হয়ত আকিল কোথাও নিরুদ্দেশ হয়ে যান। এই সময় উম হানি মক্কায় ছিলেন, এবং অনুমান করা যেতে পারে, উম হানি তাঁর পিতার ভিটেমাটির দখল পান।
ধরা যায়, উম হানি ছিলেন আবু তালেবের জ্যেষ্ঠ কন্যা। উম হানির অর্থ হচ্ছে হানির জননী বা মা। উম হানির নিজস্ব নাম নিয়ে কিছু অস্পষ্টতা আছে।
ইবনে ইসহাক লিখেছেন, উম হানির নাম ছিল হিন্দ (পৃঃ ৫৫৭); ইবনে সা’দও তাই বলেন (খণ্ড ১, পৃঃ ১৩৫)।
এদিকে মার্টিন লিঙ্গস্ (পৃঃ ১৩৫) লিখেছেন, উম হানির নাম ছিল ফাকিতাহ্। সে যাই হোক, ইসলামের ইতিহাসে এই নারী উম হানি হিসাবেই অধিক পরিচিত।
মার্টিন লিঙ্গস্ লিখেছেন, তালেব এবং নবী প্রায় একই বয়সের ছিলেন। বাল্য বয়সে নবীর সাথে জাফরের বিশেষ অন্তরঙ্গতা ছিল। এই সময় মুহাম্মদের বয়স ছিল ১২, আকিলের ১৩ আর জাফরের ৪; উম হানি ছিলেন মুহাম্মদের চাচাত বোন। অনুমান করা যায়, উম হানি কিশোর মুহাম্মদের খেলার সাথী ছিলেন। এবং এই সময় মুহাম্মদ উম হানির প্রেমে পড়ে যান (লিঙ্গস্, পৃঃ ৩৩)।
যদি আমরা ধরে নিই যে, উম হানি ছিলেন আবু তালেবের জ্যেষ্ঠ কন্যা, তখন আমরা অনুমান করে নিতে পারি যে, উম হানির বয়স নবীর বয়সের কাছাকাছি অথবা কিছু অল্প ছিল। অর্থাৎ ১২ বছর বয়স থেকেই নবী মুহাম্মদ উম হানির সাথে প্রেমে আবদ্ধ ছিলেন। এই প্রেম শুধু এক তরফা ছিল কি না, বলা দায়, তবে এই রচনা সম্পূর্ণ পড়লে অনুমান করা যাবে যে, উম হানিরও কিছু সাড়া ছিল মুহাম্মদের এই নিভৃত প্রেমের প্রতি।
হানি কি পুত্র না কন্যা? এই সরল প্রশ্নের উত্তর কোনো জীবনীকার সহজ ভাবে দেননি। উইকিতে দেখা যায়, হানিকে উম হানির পুত্র বলা হয়েছে। কিন্তু এই তথ্যের কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র নেই। আরবিতে হানি সাধারণতঃ মেয়েদের নাম হয়—তবে পুরুষের নাম হওয়াও বিচিত্র কিছু নয়। যেমন বাংলাদেশে ‘শামিম’ ছেলে অথবা মেয়ে উভয়ের নাম হতে পারে।
উম হানি কবে মারা যান, তার তথ্য ভালভাবে পাওয়া যায় না। তবে মুহাম্মদের মৃত্যুর পর উম হানি অনেক দিন জীবিত ছিলেন, অনুমান করা যায়।
(চলবে)
ভূমিকা
উম হানি এবং নবী মুহাম্মদের মাঝে পরকীয়া প্রেমের বিষয়ে আলোকপাত করা অত্যন্ত জটিল এবং বিপজ্জনক। জটিল এই কারণে যে, উম হানির ব্যাপারে আধুনিক ইসলামী পণ্ডিতেরা কোনো কিছুই জানাতে চান না। কারণ নবীর জীবনের এই অধ্যায় তেমন আনন্দদায়ক নয়। নবীর শিশু-স্ত্রী আয়েশা, পালকপুত্রের স্ত্রী যয়নবের সাথে নবীর বিবাহ, এবং আরও অন্যান্য নারীদের সাথে নবীর যৌন এবং অযৌন সম্পর্কের ব্যাপার আজ আমরা বেশ ভালভাবেই জানতে পারি। তা সম্ভব হয়েছে আন্তর্জালের অবাধ শক্তির জন্যে। আজকাল এই সব নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে এবং আমরা নবীর জীবনের অনেক অপ্রকাশিত অন্ধকার দিকগুলি অবলোকন করতে পারছি। কিন্তু উম হানির সাথে যে নবী আজীবন পরকীয়া প্রেম করে গেছেন—অগনিত স্ত্রী ও যৌনদাসী থাকা সত্ত্বেও—তা নিয়ে আজ পর্যন্ত তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো প্রবন্ধ লেখা হয়নি। উম হানি ছিলেন নবী মুহাম্মদের প্রথম এবং আজীবন প্রেম। ধরা যায়, নবী উম হানিকে মনঃপ্রাণ দিয়ে ভালবাসতেন এবং কোনোদিন এক মুহূর্তের জন্য উম হানিকে ভোলেননি। ইসলামের নির্ভরযোগ্য প্রাচীন ও মৌলিক উৎস ঘেঁটে এই রচনা লেখা হয়েছে, যাতে নবী জীবনের এই উপাখ্যান দীর্ঘ জানা যায়। যেহেতু উম হানির জীবন এবং নবীর সাথে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে কোনো ইসলামী পণ্ডিত ইচ্ছাকৃতভাবেই তেমন মাথা ঘামাননি, তাই অনেক কিছুই অনুমান করে নিতে হয়েছে। জোরালো হাদিস এবং প্রাথমিক জীবনীকারদের থেকে জানা তথ্যই এই অনুমানের ভিত্তি। এই রচনাতে নবী মুহাম্মদের পরকীয়া প্রেমের অনেক প্রশ্নের উত্তর পাঠকেরা হয়ত পাবেন।
এই রচনা লেখা বিপদজনক এই কারণে যে, ইসলামি জিহাদিদের কাছে নবীর জীবনের এই গহীন গোপনীয় ব্যাপার খুবই স্পর্শকাতর। যে লেখকই এই উপাখ্যান লিখবে, সে-ই ইসলামী সন্ত্রাসীদের শিকার হবে, তা বলা বাহুল্য।
উম হানি ও মুহাম্মদের সম্পর্কের সাথে আয়েশা, সওদা, মেরাজ, মক্কা বিজয় ও আরও কিছু প্রসঙ্গ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিছু প্রসঙ্গের পুনরাবৃত্তি করতে হয়েছে — উপায় ছিল না। ইসলামি কিতাবসমূহ যে পুনরাবৃত্তিতে ভরপুর।
উম হানির পরিচয়
নবী মুহাম্মদ জন্মের পূর্বেই তাঁর পিতা আবদুল্লাহকে হারান। ছয় বছর বয়সে নবীর মাতা আমিনাও মারা যান (ইবনে ইসহাক, পৃঃ ৭৪); মুহাম্মদের আট বছর বয়স পর্যন্ত তাঁকে লালনপালন করেন নবীর পিতামহ আবদুল মুত্তালিব। আবদুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পর মুহাম্মদের ভরণ-পোষণের ভার ন্যস্ত হয় চাচা আবু তালেবের ওপর। আবু তালেব নবীকে নিজের সন্তানের মতই লালন পালন করেন আমৃত্যু পর্যন্ত।
আমরা ইতিহাস থেকে আবু তালিব সম্পর্কে যা জানতে পাই, তা হল এই:
আবু তালেব অর্থ হল তালেবের পিতা। আবু তালেবের আপন নাম ছিল আব্দ মানাফ। তালেব ছিল তাঁর জ্যৈষ্ঠ পুত্র। আব্দ মানাফের হয়ত অনেক স্ত্রী ছিল, কিন্তু ইসলামের ইতিহাস ঘেঁটে তাঁর দুই স্ত্রীর নাম পাওয়া যায়। এঁরা হলেন—
ফাতেমা বিন্ত আসাদ। এঁর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন চার পুত্র এবং তিন কন্যা। পুত্ররা হলেন—যথাক্রমে তালিব, আকিল, জাফর এবং আলী। আর কন্যারা হলেন—উম হানি, জুমানা এবং রায়তা (আসমা বিন্ত আবু তালেব) (ইবনে সা’দ, খণ্ড ১, পৃঃ ১৩৫)।
আবু তালেবের অপর স্ত্রীর নাম ছিল ইল্লাহ বা এলাহ্। তাঁর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন এক পুত্র, তুলায়ক। এছাড়াও ইল্লাহ্র আগের স্বামীর ঔরসে জন্ম গ্রহণ করছিল আর এক পুত্র যার নাম ছিল আল হুয়েরেথ বিন আবু দুবাব (ঐ একই সূত্র)।
ইসলামের ইতিহাসে আব্দ মানাফের দুই ছেলে জাফর ও আলী সম্বন্ধে প্রচুর তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু আকিল ও তালেব সম্বদ্ধে তেমন কিছু জানা যায় না। ইবনে সা’দ লিখেছেন তালেবকে বদর যুদ্ধে জোরপূর্বক যুদ্ধ করতে পাঠানো হয়। কিন্তু তালেব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন কি না, তা পরিষ্কার নয়। কারণ বদর যুদ্ধে তাঁর মৃত দেহ কেউ পায়নি, আবার তাঁকে জীবিতও কেউ দেখেনি। ধরা যায়, তালেব বদর যুদ্ধ থেকে পালিয়ে কোথাও চলে যান। এর পর থেকে আর কেউ তার খবর জানে না—তালেব চিরকালের জন্য নিখোঁজ হয়ে গেলেন; তার কোনো উত্তরসূরিও ছিল না (ইবনে সা’দ, খণ্ড-১, পৃঃ ১৩৫)।
আকিলের ব্যাপারেও কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। শুধু এইটুকু জানা যায় যে, যখন নবী ও আলী মদিনায় চলে যান, আর জাফর যখন আবিসিনিয়ায় নির্বাসিত ছিলেন, তখন আকিল আবু তালেবের মৃত্যুর পর সমস্ত পৈত্রিক সম্পত্তি নিজের হাতে নিয়ে নেন। কারণ নবী মুহাম্মদ যখন মক্কা জয় করেন, তখন অনেকেই জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তিনি আবু তালেবের গৃহে যাবেন কি না। উত্তরে মুহাম্মদ বলেছিলেন যে, ঐ গৃহে যাবার তাঁর কোনো ইচ্ছেই নেই—কারণ আকিল তাঁদের জন্য কিছুই রাখেনি। বলা যায় যে, নবী যখন মক্কায় বিজয় পতাকা নিয়ে প্রবেশ করলেন, তখন হয়ত আকিল কোথাও নিরুদ্দেশ হয়ে যান। এই সময় উম হানি মক্কায় ছিলেন, এবং অনুমান করা যেতে পারে, উম হানি তাঁর পিতার ভিটেমাটির দখল পান।
ধরা যায়, উম হানি ছিলেন আবু তালেবের জ্যেষ্ঠ কন্যা। উম হানির অর্থ হচ্ছে হানির জননী বা মা। উম হানির নিজস্ব নাম নিয়ে কিছু অস্পষ্টতা আছে।
ইবনে ইসহাক লিখেছেন, উম হানির নাম ছিল হিন্দ (পৃঃ ৫৫৭); ইবনে সা’দও তাই বলেন (খণ্ড ১, পৃঃ ১৩৫)।
এদিকে মার্টিন লিঙ্গস্ (পৃঃ ১৩৫) লিখেছেন, উম হানির নাম ছিল ফাকিতাহ্। সে যাই হোক, ইসলামের ইতিহাসে এই নারী উম হানি হিসাবেই অধিক পরিচিত।
মার্টিন লিঙ্গস্ লিখেছেন, তালেব এবং নবী প্রায় একই বয়সের ছিলেন। বাল্য বয়সে নবীর সাথে জাফরের বিশেষ অন্তরঙ্গতা ছিল। এই সময় মুহাম্মদের বয়স ছিল ১২, আকিলের ১৩ আর জাফরের ৪; উম হানি ছিলেন মুহাম্মদের চাচাত বোন। অনুমান করা যায়, উম হানি কিশোর মুহাম্মদের খেলার সাথী ছিলেন। এবং এই সময় মুহাম্মদ উম হানির প্রেমে পড়ে যান (লিঙ্গস্, পৃঃ ৩৩)।
যদি আমরা ধরে নিই যে, উম হানি ছিলেন আবু তালেবের জ্যেষ্ঠ কন্যা, তখন আমরা অনুমান করে নিতে পারি যে, উম হানির বয়স নবীর বয়সের কাছাকাছি অথবা কিছু অল্প ছিল। অর্থাৎ ১২ বছর বয়স থেকেই নবী মুহাম্মদ উম হানির সাথে প্রেমে আবদ্ধ ছিলেন। এই প্রেম শুধু এক তরফা ছিল কি না, বলা দায়, তবে এই রচনা সম্পূর্ণ পড়লে অনুমান করা যাবে যে, উম হানিরও কিছু সাড়া ছিল মুহাম্মদের এই নিভৃত প্রেমের প্রতি।
হানি কি পুত্র না কন্যা? এই সরল প্রশ্নের উত্তর কোনো জীবনীকার সহজ ভাবে দেননি। উইকিতে দেখা যায়, হানিকে উম হানির পুত্র বলা হয়েছে। কিন্তু এই তথ্যের কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র নেই। আরবিতে হানি সাধারণতঃ মেয়েদের নাম হয়—তবে পুরুষের নাম হওয়াও বিচিত্র কিছু নয়। যেমন বাংলাদেশে ‘শামিম’ ছেলে অথবা মেয়ে উভয়ের নাম হতে পারে।
উম হানি কবে মারা যান, তার তথ্য ভালভাবে পাওয়া যায় না। তবে মুহাম্মদের মৃত্যুর পর উম হানি অনেক দিন জীবিত ছিলেন, অনুমান করা যায়।
(চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন