আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৭

ধর্মহীন ও আখিরাতে বিশ্বাসহীন নাস্তিকদের নৈতিকতার উৎস কী

লিখেছেন আক্কাস আলী

ধার্মিকদের তো ধর্মগ্রন্থ আছে, যা তাদের দিক-নির্দেশনা দেয়, ভালো কাজ করতে বলে, মন্দ থেকে বিরত থাকতে বলে। কিন্তু নাস্তিকদের তো এমন কোনো ধর্মগ্রন্থ নেই, তারা পরকালেই বিশ্বাস করে না, জাহান্নামকে ভয় পাবে - সে তো দূরের কথা। তাই নাস্তিকদের খারাপ কাজ করতে কোনো বাধা নেই। তাই তারা আকাম-কুকাম থেকে কেন বিরত থাকবে? কোন ভয়ে? তাদের নৈতিকতার উৎস কী হবে?

উগ্র ধার্মিকরা এই একই প্রশ্ন করে একটু ভিন্নভাবে: "নাস্তেকদের আল্লাহ-খোদায় বিশ্বাস নাই, জাহান্নামের ডর নাই। অরা যার তার সাথে রাস্তাঘাটে সেক্স করে বেড়ায়। ঘরের মা-বইনও অগো কাছে নিরাপদ না। অরা এতো খারাপ ক্যান?"

এ ধরনের প্রশ্ন প্রচুর পাই। আজ একটু জবাব দেয়ার প্রয়োজন বোধ করছি।



সপ্তাহখানেক আগে এক বিকেলে ধানমন্ডি লেকে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম আমি আর আমার হার্ডকোর মুমিন বন্ধু প্যারাসিটামল মজিদ। সেদিনের আড্ডায় নাস্তিকদের নৈতিকতার বিষয়টি উঠে আসে। আলাপচারিতার উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরছি। আশা করি, ধার্মিক ভাইরা এই কথোপকথন থেকেই উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

মজিদ: নাস্তিকদের জন্যে আমার খুব খারাপ লাগে। বিশাল সাগরের মাঝে একটা গন্তব্যহীন জাহাজের মতই ওদের জীবন। কোনো দিক-নির্দেশনা নেই। আহারে...
আমি: (মুচকি হেসে) ভালোই তো... যেদিক খুশি যেতে পারি। তোর কি আফসোস হচ্ছে?
মজিদ: আচ্ছা, আক্কাস, বল তো, Why good is good? Or Why killing is wrong? আমি জানি, তোদের, নাস্তিকদের, কাছে এসব প্রশ্নের কোনো সঠিক জবাব নেই।
আমি: আচ্ছা, আচ্ছা... তো তুই বল, খুন করা কেন খারাপ হবে?
মজিদ: খুন করা খারাপ, কারণ আল্লাহ খুন করতে নিষেধ করেছেন।
আমি: হাহাহা... দোস্ত, তোরা তো দেখি এক একটা রোবট! নিজেরা ভালো-মন্দ যাচাই করতে শিখিস নাই। আল্লাহ বলেছে, তাই খুন খারাপ, আবার আল্লাহ যদি খুনকে ভালো কাজ বলে ঘোষণা দিতো, তাইলে তোরা খুনকেই ভালো বলতি। রোবট যেমন একটা নির্দিষ্ট প্রোগ্রাম অনুযায়ী চলে, তোরাও তেমনি।
মজিদ: কী বলতে চাইছিস?
আমি: বলতে চাই তো অনেক কিছুই। আল্লাহ নিজেই কিন্তু সবচেয়ে বড় খুনি। প্রত্যেকটি জীবই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। সকল জীবের কথা বাদই দিলাম, আদালতে যেসব খুন-খারাবির বিচার হয়, সেগুলো মূলত আল্লাহই করেন। মানুষ উছিলা মাত্র। কুরানে সুরা আল-ইমরানের ১৪৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, "আর আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে না - সেজন্য একটা সময় নির্ধারিত রয়েছে।" এছাড়াও, সুরা আল-আনআম-এর ৬১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, "...যখন তোমাদের কারও মৃত্যু আসে তখন আমার প্রেরিত ফেরেশতারা তার আত্মা হস্তগত করে নেয়।" কী বুঝলি? কে কখন মরবে, তা নির্ধারিত আছে আগেই। আল্লাহর হুকুম ছাড়া অর্থাৎ তিনি মৃত্যুর ফেরেশতা না পাঠালে কারও মরার ক্ষমতা নেই। এর অর্থ, এসব খুন-খারাবি আল্লাহই করছেন। আল্লাহকে আগে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত না? কী বলিস, মজিদ?
মজিদ: আল্লাহই আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তিনি আমাদের খুন করার অধিকার রাখেন।
আমি: সৃষ্টি করেছেন বলেই তিনি সকল জীবকে কষ্ট দিয়ে মারার অধিকার রাখেন? এটা কি ক্ষমতার অপব্যবহার নয়? আমি তো চাই নি আমাকে সৃষ্টি করা হোক এবং কষ্ট পেয়ে আমি মারা যাই।
মজিদ: আল্লাহ কিছু করলে সেটাকে খারাপ বলা যায় না। আল্লাহ যা করেন, সব ভালো কাজ।
আমি: ও আচ্ছা। তার মানে হচ্ছে, তোদের নৈতিকতা আল্লাহর স্বেচ্ছাচারিতার ওপর নির্ভরশীল। একই কাজ মানুষের ক্ষেত্রে বলবি খারাপ, আর আল্লাহর ক্ষেত্রে বলবি ভালো। ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বুঝি একেই বলে।
মজিদ: বাদ দে, আল্লাহর ব্যাপার ভিন্ন, আমরা অত কিছু বুঝবো না। তবে এতটুকু বলতে পারি, যেটা খারাপ কাজ, সেটা খারাপই। খুন সবসময়ই খারাপ, আল্লাহ বলুক আর আর না বলুক।
আমি: আল্লাহ বললেও খুন খারাপ, আবার আল্লাহ না বললেও খুন খারাপ। তার মানে দাঁড়ালো এই যে, ভালোমন্দ যাচাইয়ের ক্ষমতা তথা নৈতিকতা আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল নয়। ঠিক বলেছি?

[এমন সময় আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন এক চাচা, একটু হুজুর টাইপের। তিনি এতক্ষণ একটু দূরে দাঁড়িয়ে আমাদের কথা শুনছিলেন। চাচাকে দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম তার নাকের গলনাঙ্ক খুবই কম।]

চাচা: নাস্তেকদের জাহান্নামের ভয় নাই। অরা ফ্রি সেক্সের মানুষ। রাস্তাঘাটে আকাম-কুকাম করতেও ওদের লজ্জা লাগে না। অরা মা-বুইনের লগেও... টুট... টুট ...
আমি: চাচা, আপনি রাস্তাঘাটে কেন সেক্স করেন না? আপনার মা-বোনের সাথে আপনি কেন ওসব করেন না?
চাচা: আল্লায় নিষেধ করছে। কুরানে মানা আছে। কাকে কাকে বিয়ে করা যাবে না, কুরানে উল্লেখ আছে।
আমি: আমি জানি, চাচা। সুরা আন-নিসা'র ২৩ নং আয়াতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন মা, বোন, কন্যাকে বিয়ে করতে। আচ্ছা, চাচা, যদি কুরানের এই আয়াতটা নাযিল না হতো, তাহলে আপনি কী করতেন? আপনি কি নিজ মা, বোন কিংবা মেয়েকে বিয়ে করতেন? আমার তো মনে হচ্ছে, ঐ আয়াতে আল্লাহর নিষেধের কারনেই আপনি এখন তা করতে পারতেছেন না, কিন্তু আয়াতটা না থাকলে আপনি অজাচারে লিপ্ত হতেন। ব্যাপারটা কি ঠিক?
চাচা: অস্তাগফিরুল্লাহ। এই আয়াত না থাকলেও আমি এমন জঘন্য কাম করতে পারতাম না। ঐ মিয়া, আমার কি বিবেক বলতে কিছু নাই?

[চাচার প্রস্থান]

আমি: বুঝলি মজিদ, কুরানে আয়াত আছে, তাই চাচা অজাচারে লিপ্ত হন নাই। আবার কুরানের উক্ত আয়াত না থাকলেও চাচা অজাচারে লিপ্ত হতেন না, কারণ চাচার নাকি বিবেক আছে। তার মানে, নৈতিকতার উৎস কুরান না। কী বলিস?
মজিদ: জানি না রে, দোস্ত।
আমি: এক-এক করে বলি। ১) কুরান বলে, দাসীদের সাথে সেক্স করা হালাল। তুই পারবি তোর বাবাকে ঘরে দাসী রেখে সেক্স করার পরামর্শ দিতে? ২) কুরান বলে, যুদ্ধবন্দিনী নারীদের সাথে সেক্স করা হালাল। তুই কি মনে করিস, এটা নৈতিক? ৩) কুরান বলে, সকল কাফের নিকৃষ্ট প্রাণী। তুই কি সত্যিই মনে করিস, সব অমুসলিম নিকৃষ্ট প্রাণী? ৪) শরীয়া আইন অনুযায়ী, কেউ ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করলে তাকে হত্যা করার বিধান আছে। পারবি এখন আমার ঘাড়ে চাপাতি বসাতে?... যদি তোর সবগুলো উত্তর "না" হয়, তাহলে বুঝতে হবে, নৈতিকতার উৎস ধর্ম নয়। তারপর দ্যাখ। তুই তো নিয়মিত পত্রিকা পড়িস। প্রায়ই দেখা যায়, অমুক মাদ্রাসার হুজুর কচি ছাত্রকে বলাৎকার করেছে। তমুক মেয়ে সৌদি আরবে কাজ করতে যেয়ে গর্ভবতী হয়ে দেশে ফিরেছে। ধর্ম ঐসব মানুষের নীতি ঠিক রাখতে পারে নি কেন? আবার, এও নিশ্চয়ই জানিস যে, ইউরোপে ধর্মের প্রভাব খুবই কম। ওখানে কিছু লোক শুধু নামেই ধার্মিক। আর নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, নরওয়ে, সুইডেনের মত দেশগুলোতে নাস্তিকরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ওখানে এখন জেলখানা বন্ধ করে দিতে হচ্ছে অপরাধীর অভাবে। কেন, বল তো?

[এমন সময় মাগরিবের আজান পড়লো। আজান শেষ হতেই এক ৭০-৮০ বছরের বৃদ্ধা আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন। ছেঁড়া জুতো, মলিন কাপড়, চোখে মোটা চশমা। ভিক্ষুক তিনি।]

বৃদ্ধা: বাবারা, কিছু সাহায্য করেন।
মজিদ: (১০ টাকা দিয়ে) এই নেন, খালা। দোয়া কইরেন আমার জন্যে। আর হ্যাঁ, আমার ছোট বোন জান্নাতুল, মেডিকেলে পড়ে। ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে, ওর জন্যেও দোয়া কইরেন, যেন রেজাল্ট ভালো হয়। (আমাকে উদ্দেশ্য করে) আক্কাস, তুই থাক, আমি নামাজটা পড়ে আসি।

[অতঃপর আমিও বৃদ্ধাকে ১০ টাকা দিলাম। বৃদ্ধা কিছুটা বিস্মিত হলেন]

বৃদ্ধা: বাবা, আমি পিছনে খাড়াইয়া তোমাগো সব কথাই হুনছি। মজিদ টাকা দিলো আল্লারে খুশি করার লাইগ্যা, আল্লাহ খুশি হইলে সে বেহেশত পাইবো। আবার, আমার দোয়াতে আল্লাহ খুশি হইয়া মজিদের বইনের রেজাল্ট ভালা কইরা দিবো। কিন্তু বাবা, তুমি তো নাস্তিক, তোমার পরকালে বিশ্বাস নাই, জান্নাতের লোভ নাই, জাহান্নামের ভয় নাই, আল্লারে খুশি করার তাগাদা নাই। তুমি ক্যান আমারে টাকা দিলা?

[প্রশ্ন শুনে বৃদ্ধার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম বেশ কিছুক্ষণ। অতঃপর জবাব দিলাম।]

আমি: ভালোবেসে দিলাম। এই ভালোবাসা নিঃস্বার্থ, শর্তহীন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন