আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

বুধবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৭

চিঠি-হুমকি - ৫: শঙ্কিত হিরাক্লিয়াস!: কুরানে বিগ্যান (পর্ব-১৬৬): ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ – একশত চল্লিশ

লিখেছেন গোলাপ

(আগের পর্বগুলোর সূচী এখানে)

"যে মুহাম্মদ (সাঃ) কে জানে সে ইসলাম জানে, যে তাঁকে জানে না সে ইসলাম জানে না।"

স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর মদিনায় স্বেচ্ছানির্বাসন-পরবর্তী ছয়টি বছরে (৬২২-৬২৮ সাল) "ধর্মের নামে আগ্রাসী আরব শক্তির উত্থান" ঘটিয়েছিলেন, তা কী উপায়ে রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াস জানতে পেরেছিলেন বলে আদি উৎসের বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকরা তাঁদের নিজ নিজ সিরাত ও হাদিস গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, তার বিস্তারিত আলোচনা গত পর্বে করা হয়েছে।

আল-তাবারীর (৮৩৮-৯২৩ খ্রিস্টাব্দ) অব্যাহত বিস্তারিত বর্ণনা: [1] [2] 


'অতঃপর হিরাক্লিয়াস তার পুলিশ-প্রধানকে ডেকে পাঠান ও তাকে বলেন, "আমার জন্য তুমি সিরিয়া তন্ন তন্ন করে খুঁজতে থাকো, যতক্ষণে না তুমি এই লোকটির এলাকার কোনো লোককে আমার কাছে হাজির করতে পারো (Turn Syria upside down for me, until you bring me someone from the people of this man)" - অর্থাৎ, তিনি আল্লাহর নবীকে বোঝাতে চেয়েছিলেন।

আল্লাহর কসম, আমরা তখন গাজায়, তার পুলিশ-প্রধান আমাদের ওপর চড়াও হয় ও বলে, "তোমরা কি হিজাজের এই লোকটির এলাকার লোকদের কেউ?" আমরা বলি, "হ্যাঁ।" সে বলে, "আমাদের সাথে সম্রাটের কাছে চলো!" তাই, আমারা তার সাথে যাত্রা শুরু করি। যখন আমরা সম্রাটের কাছে এসে হাজির হই, তিনি বলেন, "তোমরা কি এই লোকটির স্বজাতীয়দের কেউ?" আমরা বলি, "হ্যাঁ।"

তিনি জিজ্ঞাসা করেন, "তোমাদের মধ্যে কে এই লোকটির সাথে আত্মীয়তা সূত্রে সবচেয়ে বেশী নিকটস্থ?" বললাম, "আমি।" আল্লাহর কসম, আমি কখনোই এর আগে এমন কোনো বিধর্মী (খৎনাবিহীন) লোককে দেখিনি, যাকে আমি এই লোকটির চেয়ে বেশী বিচক্ষণ হিসাবে বিবেচনা করতে পারি - অর্থাৎ, হিরাক্লিয়াস।

তিনি বলেন, "তাকে আমার নিকটে নিয়ে এসো।” তিনি আমাকে তাঁর সম্মুখে বসান, আর আমার সহচরদের বসান আমার পিছনে; অতঃপর তিনি বলেন: "আমি তাকে প্রশ্ন করবো। যদি সে মিথ্যা বলে, তাকে খণ্ডন করবে।"

আল্লাহর কসম, যদি আমি মিথ্যাও বলতাম, তারা আমাকে খণ্ডন করতো না; তথাপি, আমি ছিলাম সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি, এতই উচ্চবংশজাত যে, মিথ্যা বলা আমার সাজে না। এ ছাড়াও আমি জানতাম যে, যদি আমি মিথ্যা বলি, অন্ততপক্ষে ব্যাপারটি যা হবে, তা হলো এই যে, আমার সম্বন্ধে এই বিষয়ে তারা আমার বিপক্ষে বলাবলি করবে; তাই আমি তাকে মিথ্যা বলিনি। 

হিরাক্লিয়াস বলেন, "আমাকে এই লোকটি সম্পর্কে বলো, যে তোমাদের মধ্য থেকে আবির্ভূত হয়ে দাবিগুলো করছে।" আমি তার কাছে তার গুরুত্ব কমিয়ে বলা ও তাকে তাচ্ছিল্য করে কথা বলা শুরু করি। আমি বলি, "হে সম্রাট, "তার সম্পর্কে দুশ্চিন্তা করবেন না। তাঁর গুরুত্ব এত কম যে, তার প্রভাব আপনার ওপর বর্তাবে না।" আমার এই কথার কোনো গুরুত্ব না দিয়ে তিনি বলেন, "তার সম্পর্কে আমি যা তোমাকে জিজ্ঞাসা করবো, তুমি তার জবাব দেবে।" আমি বলি, "জিজ্ঞাসা করুন, যা আপনার ইচ্ছা।"

তিনি বলেন, "তোমাদের মধ্যে কী তার বংশ পরিচয়?" আমি বলি, "বিশুদ্ধ - আমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বংশ।" তিনি জিজ্ঞাসা করেন, "বলো, তার বংশের মধ্যে এমন কেউ আছে কি যে, সে যা বলছে সেরূপ আগে কখনো তা বলেছে, যাতে এমন হতে পারে যে সে তা অনুকরণ করছে?" আমি বলি, "না।"

তিনি বলেন, "তোমাদের ওপর তার কি কোনো কর্তৃত্ব করার অধিকার ছিল, যে কারণে তোমরা পরে তাকে বেইজ্জতি করেছো, আর সে কারণেই সে এই বক্তৃতাগুলো শুরু করেছে এই অভিপ্রায়ে যে, তোমরা তাকে তার কর্তৃত্বের অধিকার ফিরিয়ে দেবে?" আমি বলি, "না।"

তিনি বলেন, "তোমাদের মধ্যে যে লোকগুলো তার অনুসারী, তাদের সম্পর্কে বলো; তারা কারা?" আমি বলি, "দুর্বল, দরিদ্র, তরুণ ছেলে ও নারীরা। যে লোকগুলো বহু বছর যাবত সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত, তাদের কেউই তার অনুসারী নন।" তিনি বলেন, "যে লোকগুলো তার অনুসারী, তাদের সম্পর্কে বলো: তারা কি তাকে ভালবাসে ও তার ওপর অবিচল থাকে, নাকি তারা তার সাথে কলহ করে ও তাকে পরিত্যাগ করে?" আমি বলি, "এমন কোনো লোক নেই যে তাকে অনুসরণ করেছে, অতঃপর তাকে পরিত্যাগ করেছে।"

তিনি বলেন, "তোমাদের ও তার মধ্যের যে যুদ্ধ-বিগ্রহ, সে সম্পর্কে বলো।" আমি বলি, "বিভিন্ন প্রকার - কখনও কখনও আমাদের বিরুদ্ধে সে জয়ী হয়, আর কখনও কখনও তার বিরুদ্ধে আমরা হই জয়ী।"

তিনি বলেন, "আমাকে বলো, সে কি বিশ্বাসঘাতকতা করে?" (এই বিষয়টি ছাড়া তিনি আমাকে তার সম্বন্ধে আর যা যা জিজ্ঞাসা করেছেন, সে ব্যাপারে আমি তার [মুহাম্মদের] চরিত্র সম্পর্কে যুক্তিযুক্ত বিরূপ মন্তব্য প্রকাশের কারণ খুঁজে পাইনি।) আমি বলি, "নাতার সঙ্গে আমরা এক সন্ধিচুক্তিতে আবদ্ধ, (আর) আমরা শঙ্কিত এই ভেবে যে, সে আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে।"

আল্লাহর কসম, আমি কী বলেছি, সে বিষয়ে হিরাক্লিয়াস কোনো মনোযোগ না দিয়ে আমার সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের পুনরাবৃত্তি করেন। তিনি বলেন, "আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, তোমাদের মধ্যে কী তার বংশ পরিচয়, তুমি বলেছিলে যে তা বিশুদ্ধ, তোমাদের শ্রেষ্ঠ বংশজাতদের একটি; ঈশ্বর যখন কাউকে নবী হিসাবে মনোনীত করতে চায়, সে শুধু শ্রেষ্ঠ বংশজাতদের মধ্যে থেকে এভাবেই তাকে মনোনীত করে। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, তার বংশে এমন কি কেউ আছে যে, সে যা বলছে সেরূপ আগে কখনো বলেছে, যাতে এমন হতে পারে যে সে তা অনুকরণ করছে; আর তুমি বলেছিলে যে, না। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, তোমাদের ওপর তার কি কোনো কর্তৃত্ব করার অধিকার ছিল, যে কারণে তোমরা পরে তাকে বেইজ্জতি করেছো, আর সে কারণেই সে এই বক্তৃতাগুলো শুরু করেছে এই অভিপ্রায়ে যে, তোমরা তাকে তার কর্তৃত্বের অধিকার ফিরিয়ে দেবে; আর তুমি বলেছিলে যে, না। আমি তোমাকে তার অনুসারীদের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আর তুমি বলেছিলে যে, তারা হলো দুর্বল, দরিদ্র, তরুণ ও নারীরা; প্রত্যেক যুগে যুগে নবীদের অনুসারীরা এমনটিই হয়ে এসেছে। আমি তোমাকে তার অনুসারীদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তার অনুসারীরা কি তাকে ভালবাসে ও তার ওপর অবিচল থাকে, নাকি তারা তার সাথে কলহ করে তাকে পরিত্যাগ করে চলে যায়; তুমি বলেছিলে যে, এমন কোনো লোক নেই, যে তাকে অনুসরণ করেছে অতঃপর তাকে পরিত্যাগ করে চলে গিয়েছে; আর এ রূপটিই হলো বিশ্বাসের মাধুরী। এটি অন্তরে এ জন্য প্রবেশ করে না যে, পরে তা সেখান থেকে বিদায় নেবে। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, সে বিশ্বাসঘাতকতা করে কি না, তুমি বলেছিলে যে, না।

এজন্যই, তুমি যদি আমাকে তার সম্পর্কে সত্য বলে থাকো, সে নিশ্চিতই আমার পায়ের তলার এই মাটি জোরপূর্বক আমার কাছ থেকে কেড়ে নেবে। যদি আমি তার সঙ্গে থাকতাম, তবে হয়তো আমি তার পা ধুয়ে দিতাম! তুমি তোমার ব্যবসার কাজে ফিরে যাও।" তাই, আমি তার ওখান থেকে দুই হাতে একত্রে তালি বাজাতে বাজাতে ‌চলে আসি, আর বলি, "হে ঈশ্বর উপাসক, ‘আবু কাবশাহ পুত্র’-এর ব্যাপারটি এতই সংকটজনক হয়ে উঠেছে। এখন তার ভয়ে গ্রীক সম্রাটরা তাদের রাজ্যের সিরিয়া এলাকায় ভীত-সন্ত্রস্ত।”’ ---- [3]

(---- And so, if you have told me the truth about him he shall surely wrest from me this very ground under my feet. Would that I were with him that I might wash his feet! Depart to your business!" So, I left his presence, clapping my hands together and saying, "0 worshipers of God, the affair of the son of Abu Kabshah has become serious. Now the kings of the Greeks fear him in their domain in Syria!"----)

- অনুবাদ, টাইটেল ও [**] যোগ - লেখক।

ইমাম বুখারী (৮১০-৮৭০ সাল), ইমাম মুসলিম (৮২১-৮৭৫ সাল) ও ইমাম তিরমিজীর (৮২৪-৮৯২ সাল) বর্ণনা: [4] [5] 6]

আবু সুফিয়ান ইবনে হারবের উদ্ধৃতি সাপেক্ষে 'আবদুল্লাহ বিন আব্বাসের বর্ণনার ভিত্তিতে এ প্রসঙ্গে ইমাম বুখারী (সহি বুখারী: ভলুম ১, বই নম্বর ১, হাদিস নম্বর ৬),    ইমাম মুসলিম (সহি মুসলিম: বই ০১৯, হাদিস ৪৩৮০)  ইমাম তিরমিজী (সহি তিরমিজী: চ্যাপ্টার ১১, হাদিস নম্বর ০০৬ [০৮৭]) তাঁদের নিজ নিজ হাদিস গ্রন্থে এই উপাখ্যানের যে বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন, তা ওপরে বর্ণিত আল-তাবারী <ইবনে হুমায়েদ < সালামাহ <মুহাম্মদ ইবনে ইশাক <ইবনে শিহাব আল-যুহরি < উবাইদুল্লাহ বিন আবদুল্লাহ বিন উতবা বিন মাসুদ < আবদুল্লাহ বিন আব্বাস < আবু সুফিয়ান বিন হারব হইতে বর্ণিত বর্ণনারই অনুরূপ।

পার্থক্য এই যে:

(১) ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম ও ইমাম তিরমিজী তাঁদের বর্ণনায় যা উল্লেখ করেছেন, তা হলো এই যে, হিরাক্লিয়াস তার দরবারে আবু সুফিয়ান-কে তলব করেছিলেন দিহায়া বিন কালবি > বসরার শাসনকর্তা > বসরার শাসনকর্তার বার্তাবাহক মারফত মুহাম্মদের 'চিঠি-হুমকি'-টি হিরাক্লিয়াসের কাছে পৌঁছানো ও তা পাঠ করার পর। অন্যদিকে, ইবনে ইশাকের বর্ণনা মতে, হিরাক্লিয়াস তার দরবারে আবু সুফিয়ান-কে তলব করেছিলেন মুহাম্মদের 'চিঠি-হুমকি'-টি পাওয়ার আগে, মুহাম্মদ সম্পর্কে তার হঠাৎ অলৌকিক 'স্বপ্ন দর্শন' ঘটনার পর; অতঃপর তিনি পেয়েছিলেন মুহাম্মদের চিঠি-হুমকিটি!

(২) ইমাম বুখারীর বর্ণনা মতে (ইমাম মুসলিমের বর্ণনা ইমাম বুখারীর বর্ণনারই অনুরূপ) মুহাম্মদের চিঠি-হুমকিটি পাওয়ার পর হিরাক্লিয়াস যখন আবু সুফিয়ান-কে তার দরবারে হাজির করে এক দোভাষীর মারফত মুহাম্মদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন, তখন সেই দরবারে তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তার সকল প্রবীণ বিশিষ্টজনেরা। অতঃপর আবু সুফিয়ানের সাথে কথোপকথন ও ভাষণ শেষে যখন তিনি মুহাম্মদের সেই চিঠিটি তার দরবারের লোকদের পড়ে শোনান, তখন সেখানে ভীষণ চিৎকার ও শোরগোল শুরু হয়ে যায়; যে কারণে আবু সুফিয়ান ও তাঁর সহচরদের নিয়ে রাজদরবার ত্যাগ করেন ও তাঁর সঙ্গীদের বলেন, "--- ‘ইবনে আবু কাবশাহ (আল্লাহর নবী মুহাম্মদ)’ এর ব্যাপারটি এতই প্রকট হয়ে উঠেছে যে বানু আসফার (বাইজেনটাইন) সম্রাট পর্যন্ত তার ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত।” ----

(--- "When Heraclius had finished his speech and had read the letter, there was a great hue and cry in the Royal Court. So we were turned out of the court. I told my companions that the question of Ibn-Abi-Kabsha) (the Prophet Muhammad) has become so prominent that even the King of Bani Al-Asfar (Byzantine) is afraid of him.”----)

>>> রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াস "মুহাম্মদের চিঠি হুমকিটি পাওয়ার আগেই" আবু সুফিয়ান বিন হারব-কে তার দরবারে হাজির করান (ইবনে ইশাকের বর্ণনা), কিংবা তিনি তাঁকে "মুহাম্মদের চিঠি হুমকিটি পাওয়ার পর" তার দরবারে হাজির করান (ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম ও ইমাম তিরমিজীর বর্ণনা); আদি উৎসের 'সিরাত ও হাদিস' গ্রন্থের বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদের ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় যে বিষয় গুলো অত্যন্ত স্পষ্ট, তা হলো:

(ক) হিরাক্লিয়াস আবু সুফিয়ান-কে যে মূখ্য উদ্দেশ্যে তার দরবারে ডেকে পাঠিয়েছিলেন তা হলো, "মুহাম্মদের ব্যাপারে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা!" 

(খ) তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পর হিরাক্লিয়াসের ভাষণ ও বিবৃতির পর, দরবারে উপস্থিত তার পরিষদবর্গরা শুরু করেছিলেন শোরগোল ও চেঁচামেচি (ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিমের বর্ণনা)। এই শোরগোল ও চেঁচামেচি  প্রত্যক্ষ করার পর আবু সুফিয়ানের উক্তি"ইবনে আবু কাবশাহর ব্যাপারটি এতই প্রকট হয়ে উঠেছে যে, বাইজেনটাইন সম্রাট পর্যন্ত তার ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত।” ----

(গ) আবু সুফিয়ানের সঙ্গে ঐ অল্প সময়ের কথোপকথন ও কয়েকটি প্রশ্নের জবাব জানার মাধ্যমে “হিরাক্লিয়াস নিশ্চিতরূপে নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, তাকে 'চিঠি হুমকি প্রদানকারী' মুহম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ একজন সত্য নবী!” 

>>> আবু সুফিয়ান বিন হারব তাঁর সঙ্গীদের উপস্থিতিতে (যে সঙ্গীরা যদি তিনি মিথ্যাও বলেন তথাপি তাঁর বক্তব্যকে খণ্ডন করবেন না) হিরাক্লিয়াসের প্রশ্নের যে জবাবগুলো দিয়েছিলেন, পরবর্তীতে হিরাক্লিয়াস আবু সুফিয়ানের প্রদত্ত সেই তথ্য-উপাত্তের সত্যতার যাচাই কখনো করেছিলেন, এমন তথ্য জানা যায় না। কিন্তু যা আমরা নিশ্চিতরূপে জানি, তা হলো - মুহাম্মদের মৃত্যুর পর নিরবচ্ছিন্ন মুহাম্মদ-অনুসারী মুসলিম শাসন আমলের প্রায় ১১০-২০০ বছরের ও অধিক পরে (পর্ব-৪৪) সিরাত ও হাদিস গ্রন্থকারদের বর্ণিত এই উপাখ্যানে:

আবু-সুফিয়ানের বেশ কিছু জবাব, "মুহাম্মদের জবানবন্দির (কুরান)" সম্পূর্ণ বিপরীত! 

উদাহরণ:

“তারা কি তাকে ভালবাসে ও তার ওপর অবিচল থাকে, নাকি তারা তার সাথে কলহ করে ও তাকে পরিত্যাগ করে?" আমি বলি, "এমন কোনো লোক নেই, যে তাকে অনুসরণ করেছে, অতঃপর তাকে পরিত্যাগ করেছে।"

>> মুহাম্মদের সকল অনুসারী যে তাঁর আদেশের ওপর অবিচল ছিলেন না, সে বিষয়ে আল্লাহর নামে "মুহাম্মদের জবানবন্দি" অত্যন্ত স্পষ্ট। 

এ বিষয়ের আলোচনা "তারা বলে: এ ভূখণ্ডে আমরা ছিলাম অসহায় (পর্ব-৪১)" - যেখানে আমরা জানতে পেরেছি যে মুহাম্মদের অনেক অনুসারী তাঁর আদেশ 'হিজরত' অমান্য করেছিলেন; "বনি কেইনুকা গোত্র উচ্ছেদ (পর্ব-৫১)" "বনি নাদির গোত্র উচ্ছেদ (পর্ব-৫২)" - যেখানে আবদুল্লাহ বিন উবাই মুহাম্মদের প্রত্যক্ষ বিরোধিতা করে এই দুই গোত্রের লোকদের প্রাণ রক্ষা করেছিলেন; "ওহুদ যুদ্ধ: নবীর যুদ্ধযাত্রা (পর্ব: ৫৫)" - যেখানে আবদুল্লাহ বিন উবাই মুহাম্মদের আদেশ অমান্য করে এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে পথিমধ্যে থেকে তাঁর এক-তৃতীয়াংশ সৈন্য সহ মদিনায় ফিরে আসেন; "ওহুদ যুদ্ধ: বিনষ্ট গৌরব পুনরুদ্ধারে কলা-কৌশল (পর্ব-৭০)"- যেখানে মুহাম্মদ এই যুদ্ধে তাঁর পরাজয়ের জন্য তাঁর অনুসারীদের দায়ী করেন; "বানু আল-মুসতালিক হামলা (পর্ব: ৯৭-৯৮)" - যেখানে আবদুল্লাহ বিন উবাই ও তাঁর সমর্থকদের বিরোধিতার পরিপ্রেক্ষিতে মদিনা প্রত্যাবর্তন-কালে "“সূরা মুনাফিকুন (সুরা নম্বর ৬৩), মোট আয়াত ১১” নামের এক সম্পূর্ণ সুরা রচনা করেন - ইত্যাদি পর্বে করা হয়েছে।

উদাহরণ:

"আমাকে বলো, সে কি বিশ্বাসঘাতকতা করে?" আমি বলি, "না।"

>> অবিশ্বাসীরা যে মুহাম্মদকে বিশ্বাসী মনে করতেন না, তাঁরা তাঁকে জানতেন এক "মিথ্যাবাদী, উন্মাদ ও যাদুগ্রস্ত" ব্যক্তিরূপেতার সাক্ষ্য হয়ে আছে মুহাম্মদের স্বরচিত জবানবন্দী ‘কুরান’। 

এ বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা “এ সেই কিতাব যাতে কোনোই সন্দেহ নেই (পর্ব-১৮)" পর্বে করা হয়েছে। হুদাইবিয়া সন্ধিচুক্তি বিষয়ে আবু সুফিয়ানের আশংকা ছিল সে কারণেই। তাঁর আশংকা যে অমূলক ছিল না তা মুহাম্মদ প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। এ বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা "হুদাইবিয়া সন্ধি: চুক্তি ভঙ্গ (১২৫-১২৯)" পর্বে করা হয়েছে।

এ ছাড়াও,

৩:৯০ - "যারা ঈমান আনার পর অস্বীকার করেছে এবং অস্বীকৃতিতে বৃদ্ধি ঘটেছে, কস্মিণকালেও তাদের তওবা কবুল করা হবে না। আর তারা হলো গোমরাহ।"

৯:৬৪-৬৬ - "মুনাফেকরা এ ব্যাপারে ভয় করে যে, মুসলমানদের উপর না এমন কোন সূরা নাযিল হয়, যাতে তাদের অন্তরের গোপন বিষয় অবহিত করা হবে। সুতরাং আপনি বলে দিন, ঠাট্টা-বিদ্রপ করতে থাক; আল্লাহ তা অবশ্যই প্রকাশ করবেন যার ব্যাপারে তোমরা ভয় করছ। (৬৫) আর যদি তুমি তাদের কাছে জিজ্ঞেস কর, তবে তারা বলবে, আমরা তো কথার কথা বলছিলাম এবং কৌতুক করছিলাম। আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহর সাথে, তাঁর হুকুম আহকামের সাথে এবং তাঁর রসূলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? (৬৬) ছলনা কর না, তোমরা যে কাফের হয়ে গেছ ঈমান প্রকাশ করার পর। তোমাদের মধ্যে কোন কোন লোককে যদি আমি ক্ষমা করে দেইও, তবে অবশ্য কিছু লোককে আযাবও দেব। কারণ, তারা ছিল গোনাহগার।"

৯:৭৩-৭৪ - "হে নবী, কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করুন এবং মুনাফেকদের সাথে তাদের সাথে কঠোরতা অবলম্বন করুন। তাদের ঠিকানা হল দোযখ এবং তাহল নিকৃষ্ট ঠিকানা। (৭৪) তারা কসম খায় যে, আমরা বলিনি, অথচ নিঃসন্দেহে তারা বলেছে কুফরী বাক্য এবং মুসলমান হবার পর অস্বীকৃতিজ্ঞাপনকারী হয়েছে। আর তারা কামনা করেছিল এমন বস্তুর যা তারা প্রাপ্ত হয়নি। আর এসব তারই পরিণতি ছিল যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূল তাদেরকে সম্পদশালী করে দিয়েছিলেন নিজের অনুগ্রহের মাধ্যমে। বস্তুতঃ এরা যদি তওবা করে নেয়, তবে তাদের জন্য মঙ্গল। আর যদি তা না মানে, তবে তাদের কে আযাব দেবেন আল্লাহ তা’আলা, বেদনাদায়ক আযাব দুনিয়া ও আখেরাতে। অতএব, বিশ্বচরাচরে তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী-সমর্থক নেই।" 

১৬:১০৬ -"যার উপর জবরদস্তি করা হয় এবং তার অন্তর বিশ্বাসে অটল থাকে সে ব্যতীত যে কেউ বিশ্বাসী হওয়ার পর আল্লাহতে অবিশ্বাসী হয় এবং কুফরীর জন্য মন উম্মুক্ত করে দেয় তাদের উপর আপতিত হবে আল্লাহর গযব এবং তাদের জন্যে রয়েছে শাস্তি।"

সুতরাং,

“তারা তাকে ভালবাসে ও তার ওপর অবিচল থাকে, তারা তার সাথে কলহ করে না ও তাকে পরিত্যাগ করে চলে যায় না; কিংবা, এমন কোনো লোক নেই যে তাকে অনুসরণ করেছে, অতঃপর তাকে পরিত্যাগ করেছে; কিংবা, ‘অবিশ্বাসীদের সঙ্গে’ মুহাম্মদ কোন বিশ্বাসঘাতকতা করেননি”, ইত্যাদি দাবি সত্য হলে তা মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ (আল্লাহ)-কেই 'মিথ্যাবাদী' প্রমাণ করে!

(চলবে)

[কুরানের উদ্ধৃতি সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ (হারাম শরীফের খাদেম) কর্তৃক বিতরণকৃত বাংলা তরজমা  থেকে নেয়া, অনুবাদে ত্রুটি-বিচ্যুতির দায় অনুবাদকারীর।  কুরানের ছয়জন বিশিষ্ট ইংরেজি অনুবাদকারীর ও চৌত্রিশ-টি বিভিন্ন ভাষায় পাশাপাশি অনুবাদ এখানে]

তথ্যসূত্র ও পাদটীকা: 

[1] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৮, ইংরেজী অনুবাদ: Michael Fishbein, University of California, Los Angeles, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-7914-3150—9 (pbk), পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৬৩-১৫৬৫; বিনামূল্যে ডাউনলোড লিঙ্ক:

[2] অনুরূপ বর্ণনা: “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৬৫৪-৬৫৫; বিনামূল্যে ডাউনলোড লিঙ্ক:

[3] Ibid আল-তাবারী, নোট নম্বর ৪৪১, পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৬৫ 
'আবু কাবশাহ - অর্থাৎ, মুহাম্মদ। মক্কার পৌত্তলিকরা কেন মুহাম্মদের ডাক নাম "আবু কাবশাহ পুত্র" রেখেছিল তার ব্যাখ্যায় সূত্র-ভেদে বিভিন্নতা আছে। বলা হয়ে থাকে যে, আবু কাবশাহ ছিলেন বানু খোজা গোত্রের এক ব্যক্তি, যিনি কুরাইশদের মূর্তি পূজার পদ্ধতি পরিহার করেন ও তার পরিবর্তে তিনি 'সূর্য সাইরাস  (star Sirius)' এর পূজা করতেন। পৌত্তলিকরা মুহাম্মদ-কে "আবু কাবশাহ পুত্র" নামে সম্বোধন করতেন এই কারণে যে মুহাম্মদ ও আবু কাবশাহর মত তাদের পূজার পদ্ধতি বর্জন করেছিলেন। অন্যরা বলে যে, আবু কাবশাহ ছিল মুহাম্মদের নানা (ওহাব ইবনে আবেদ মানাফ) কিংবা তাঁর ধাত্রী-মা এর স্বামীর ডাক নাম।'

[4] সহি বুখারী: ভলুম ১, বই নম্বর ১, হাদিস নম্বর ৬  
এই পর্বের প্রাসঙ্গিক অংশ: ‘Narated By 'Abdullah bin 'Abbas: Abu Sufyan bin Harb informed me that Heraclius had sent a messenger to him while he had been accompanying a caravan from Quraish. They were merchants doing business in Sham (Syria, Palestine, Lebanon and Jordan), at the time when Allah's Apostle had truce with Abu Sufyan and Quraish infidels. So Abu Sufyan and his companions went to Heraclius at Ilya (Jerusalem). Heraclius called them in the court and he had all the senior Roman dignitaries around him. He called for his translator who, translating Heraclius's question said to them, "Who amongst you is closely related to that man who claims to be a Prophet?" Abu Sufyan replied, "I am the nearest relative to him (amongst the group)."

Heraclius said, "Bring him (Abu Sufyan) close to me and make his companions stand behind him." Abu Sufyan added, Heraclius told his translator to tell my companions that he wanted to put some questions to me regarding that man (The Prophet) and that if I told a lie they (my companions) should contradict me." Abu Sufyan added, "By Allah! Had I not been afraid of my companions labeling me a liar, I would not have spoken the truth about the Prophet. The first question he asked me about him was: 'What is his family status amongst you?' I replied, 'He belongs to a good (noble) family amongst us.' Heraclius further asked, 'Has anybody amongst you ever claimed the same (i.e. to be a Prophet) before him?'I replied, 'No.'He said, 'Was anybody amongst his ancestors a king? 'I replied, 'No.'Heraclius asked, 'Do the nobles or the poor follow him?' I replied, 'It is the poor who follow him.'He said, 'Are his followers increasing decreasing (day by day)?' I replied, 'They are increasing.' He then asked, 'Does anybody amongst those who embrace his religion become displeased and renounce the religion afterwards?' I replied, 'No.'

Heraclius said, 'Have you ever accused him of telling lies before his claim (to be a Prophet)?' I replied, 'No. 'Heraclius said, 'Does he break his promises?' I replied, 'No. We are at truce with him but we do not know what he will do in it.' I could not find opportunity to say anything against him except that. Heraclius asked, 'Have you ever had a war with him?'I replied, 'Yes.' Then he said, 'What was the outcome of the battles?'I replied, 'Sometimes he was victorious and sometimes we.' Heraclius said, 'What does he order you to do?' I said, 'He tells us to worship Allah and Allah alone and not to worship anything along with Him, and to renounce all that our ancestors had said. He orders us to pray, to speak the truth, to be chaste and to keep good relations with our Kith and kin.' --
------- If what you have said is true, he will very soon occupy this place underneath my feet and I knew it (from the scriptures) that he was going to appear but I did not know that he would be from you, and if I could reach him definitely, I would go immediately to meet him and if I were with him, I would certainly wash his feet.' ------- Abu Sufyan then added, "When Heraclius had finished his speech and had read the letter, there was a great hue and cry in the Royal Court. So we were turned out of the court. I told my companions that the question of Ibn-Abi-Kabsha) (the Prophet Muhammad) has become so prominent that even the King of Bani Al-Asfar (Byzantine) is afraid of him. Then I started to become sure that he (the Prophet) would be the conqueror in the near future till I embraced Islam (i.e. Allah guided me to it)." -------


[5] সহি মুসলিম: বই ০১৯, হাদিস ৪৩৮০
‘------ Accordingly, we left, (Addressing my companions) while we were coming out (of the place). I said: Ibn Abu Kabsha (referring sarcastically to the Holy Prophet) has come to wield a great power. Lo! (even) the king of the Romans is afraid of him. ----

[6] সহি তিরমিজী: চ্যাপ্টার ১১, হাদিস নম্বর ০০৬ (০৮৭):

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন