আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

শনিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৭

কোন কোরআন?

লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ

মাওলানা সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী ১৯৪২ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিরিশ বছরের একটানা চেষ্টায় তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কাজটি শেষ করেন - "তাফহীমুল কোরআন" নামে তিনি প্রায় ৫ হাজার পৃষ্ঠার কোরআনের ব্যাখ্যা (তাফসীর) গ্রন্থ রচনা করেন। ১২ টির বেশি ভাষায় তাঁর এই তাফসীর গ্রন্থটি অনূদিত হয়েছে এবং কোরআন ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে এটি একটি যুগান্তকারী রচনা হিসাবে বিবেচিত হয় মুসলিম সমাজে! গ্রন্থের 'প্রসঙ্গ কথায়' মারাত্মক কিছু কথা বলেছেন তিনি: "কুরআন মজিদের সূরাগুলো আসলে ছিল এক একটি ভাষণ। ইসলামী দাওয়াতের বিশেষ একটি পর্যায়ে একটি বিশেষ সময়ে প্রতিটি সূরা নাযিল হয়েছিলো। কোরআন একটি রচনার আকারে নয়, বরং ভাষণ আকারে বর্ণিত হয়েছে।”

সত্যিই তাই, কোরআন মুহাম্মদের নবী-জীবনের ২৩ বছর সময়ে আল্লার (!) নামে দেওয়া ভাষণের সংকলন ভিন্ন কিছু নয়! এ বিষয়ে মাওলানা সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী সাহেবের কথার সাথে একমত হলেও কোরআনের সংকলন সম্পর্কে ভূমিকায় লেখা তাঁর বর্ণনার সাথে একমত হবার উপায় নেই আমাদের; তিনি বলেছেন: "আজ যে কুরআন মজিদ আমাদের হাতে আছে, সেটি হজরত আবু বকর সিদ্দীকের (রা.) নোসখার অনুলিপি। এই অনুলিপিটি হযরত উসমান (রা.) সরকারী ব্যবস্থাপনায় সারা দুনিয়ার দেশে দেশে পাঠিয়েছিলেন। বর্তমানেও দুনিয়ার বিভিন্ন স্থানে কুরআনের সেই প্রামাণ্য নোসখাগুলো পাওয়া যায়। কুরআন মজীদ সঠিকভাবে সংরক্ষিত হবার ব্যাপারে যদি কারোর মনে সামান্যতমও সংশয় থাকে, তাহলে মানসিক সংশয় দূর করার জন্য তিনি পশ্চিম আফ্রিকায় গিয়ে সেখানকার কোনো বই বিক্রেতার দোকান থেকে এক খণ্ড কুরআন মজিদ কিনে নিতে পারেন। তারপর সেখান থেকে চলে আসতে পারেন ইন্দোনেশিয়ার জাভায়। জাভার কোনো হাফেযের মুখে কুরআনের পাঠ শুনে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে কেনা তাঁর হাতের নোসখাটির সাথে তা মিলিয়ে দেখতে পারেন। অতপর দুনিয়ার বড় বড় গ্রন্থাগারগুলোয় হজরত উসমানের (রা.) আমল থেকে নিয়ে আজ পর্যন্তকার যতগুলো কুরআনের নোসখা রক্ষিত আছে, সবগুলোর সাথে সেটি মেলাতে পারেন। তিনি যদি তার মধ্যে কোন একটি হরফ নোকতার পার্থক্য দেখতে পান, তাহলে সারা দুনিয়াকে এই অভিনব আবিষ্কারের খবরটি জানানো তার অবশ্যকর্তব্য।"

আজকের এই পোস্টের বিষয় মাওলানা সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী সাহেবের ভূমিকায় লেখা অংশটুকুর প্রতিটি বিষয়কে মিথ্যা প্রমাণিত করা, যা আদতে প্রতিটি মুসলিমের চরম বিশ্বাসেরই অন্ধ প্রকাশ মাত্র! আমরা প্রমাণ করবো:

বিষয়বস্তু - ১. কোরআন মোটেই একটিমাত্র নয়!

বিষয়বস্তু - ২. কোরআন মোটেই সঠিকভাবে সংরক্ষিত নয়!

বিষয়বস্তু - ৩. কোরআনগুলোর ভেতরে একাধিক পার্থক্য আছে!

বিষয়বস্তু - ১:
১৯৯৩ সালে কোরআন নিয়ে আমি প্রথম ধাক্কা খাই। আমার এক বন্ধুর চাচা সৌদি আরবের মদিনা থেকে উপহার দেবার জন্য ১০ টি কোরআন কিনে আনেন, ঘটনাক্রমে আমি সেসময় বন্ধুর বাসাতেই ছিলাম। একটি বাদে ৯ টি কোরআনের প্রচ্ছদ ছিলো হুবুহু এক রকম! আমার আগ্রহের কারণ হয়ে দাঁড়ায় সেই ভিন্ন প্রচ্ছদের কোরআনটি! ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকে আরবি কোরআন পড়ি, তবে এই কোরআনটির সূরা ফাতিহা পড়তে গিয়ে আমার চোখে কিছু ভিন্নতা চোখে পড়ে! কোরআনটির ফাতিহার প্রথম আয়াতটি অনেক লম্বা অন্য ৯ টি কোরআনের সেই আয়াত থেকে! আমি বিস্ময়-চোখে নিজেকে প্রশ্ন করেছিলাম, এমনটা কেন?! সেই দিন থেকে মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই কোরআন আমার কাছে মনুষ্যরচিত ভুলভাল গ্রন্থের পরিচয় নিয়ে প্রকাশিত হয় এবং আস্তিকতার কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দেয়!

যিনি এই পর্বটি এখন পড়ছেন, আপনাকে অনুরোধ করবো আপনার পিসিতে বা মোবাইলে থাকা কোরআনের সূরা ফাতিহা বের করুন! দেখুন ফাতিহার প্রথম আয়াত শেষ হয়েছে এইটুকুতে:


(১) বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

কিন্তু আমার হাতে যে-কোরআন ছিলো, তাতে প্রথম আয়াত ‘বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ নয়, বরং তা শেষ হচ্ছে এমনভাবে:

(১) বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, আলহামদু লিল্লা-হি রাববিল আলামীন।

একটিতে ‘বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পুরো একটি আয়াত আর অন্যটিতে ‘বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ হচ্ছে একটি আয়াতের অংশ! আপনার হাতে যে-কোরআনটি আছে, তা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সুন্নী গবেষণা প্রতিষ্ঠান মিশরের আল আজাহার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ সম্পাদনা করা ১৯২৩/২৪ সালের হাফস্ (Hafs) সংস্করণ। আর আমি যেটি পেয়েছিলাম, সেটি হচ্ছে মদিনার কিং ফাহাদ কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স (King Fahd Complex for Printing the Holy Quran www.qurancomplex.org) থেকে ছাপা ওয়ারস্ (Warsh) সংস্করণ! ১৯২৩/২৪ সালের আগের হাফস্ (Hafs) সংস্করণে সূরা ফাতিহার 'বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম'-কে কোনো আয়াত হিসাবে গণ্য করা হত না! কেবলমাত্র 'আলহামদু লিল্লা-হি রাববিল আলামীন' ছিল ১৯২৩ সালের আগের হাফস্ (Hafs) সংস্করণের প্রথম আয়াত!

কিং ফাহাদ কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স মদিনা থেকে একই সাথে একই মর্যাদায় হাফস্ (Hafs) এবং ওয়ারস্ (Warsh) সংস্করণ ছাপা হয়, এবং দুটোই সমান ভাবে বৈধ কোরআন! একথা সত্য হাফস্ (Hafs) সংস্করণ সমগ্র পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত, কিন্তু তারপরেও ওয়ারস্ (Warsh) সংস্করণ সমানভাবে বৈধ এবং এখনও সৌদি আরবসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ সংস্করণ পাওয়া যায়, এবং এই পোস্টটি শেষ হবার আগেই আপনি এ দু'টির একটি করে কপির মালিক হয়ে যাবেন! তাহলে আপাতত আমরা ভাবতেই পারি: বিষয়বস্তু - ১. কোরআন মোটেই একটিমাত্র নয়! প্রমাণিত। বিশ্বাস করার দরকার নেই, কেবল মাথায় রাখুন বিষয়টি!


ছবি - ০১: যাচাই করে নিন, আপনি কোন কোরআন পড়ছেন!

বিষয়বস্তু - ২:
কোরআনে আছে 
 "নিশ্চয় আমিই কুরআন অবতীর্ণ/নাযিল/অবতারণ করেছি এবং আমিই উহার সংরক্ষক/হেফাযতকারী/সংরক্ষণকারী।" সূরা হিজর (১৫:৯)

"ইহা ঐ গ্রন্থ যার মধ্যে কোন সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ নেই; ধর্ম-ভীরুদের জন্য এ গ্রন্থ পথনির্দেশ।" সূরা বাকারা (২:২)

ঠিক আছে, মেনে নিলাম আপনি মহান ক্ষমতাধর চুল ফেলানো নাপিত। স্যরি, মহান ক্ষমতাধর আল্লাহতালা আপনি! আপনার হেফাযত/সংরক্ষণের নমুনা এখন আমরা দেখবো!

সহিহ বুখারী: খণ্ড ৮: অধ্যায় ৮২: হাদিস ৮১৬
ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমর (রা) বলেছেন, আমার আশঙ্কা হচ্ছে যে, দীর্ঘ যুগ অতিক্রান্ত হবার পর কোন ব্যক্তি এ কথা বলে ফেলতে পারে যে, আমরা আল্লাহর কিতাবে রজমের বিধান পাচ্ছি না। ফলে এমন একটি ফরয পরিত্যাগ করার দরুন তারা পথভ্রষ্ট হবে যা আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন। সাবধান! যখন প্রমাণ পাওয়া যাবে অথবা গর্ভ বা স্বীকারোক্তি বিদ্যমান থাকবে তখন ব্যভিচারীর জন্য রজমের বিধান নিঃসন্দেহ অবধারিত। সুফিয়ান (র) বলেন, অনুরূপই আমি স্মরণ রেখেছি: সাবধান! রাসূলুল্লাহ (সা) রজম করেছেন, আর আমরাও তারপরে রজম করেছি।

মুয়াত্তা মালিক: দুধপান সম্পর্কীত, অধ্যায় ৩০ হাদিস ১২৯২
আয়েশা (রা) বলিয়াছেন: কুরআনে যাহা অবতীর্ণ হইয়াছিল তা-হতে দশবার দুধ চোষার কথা নির্ধারিত ছিল - যাহা হারাম করিবে, তারপর উহা রহিত হইয়া যায়। নির্ধারিত পাঁচ বার দুগ্ধ চোষার (অবতীর্ণ হুকুমের) দ্বারা। অতপর রসুলুল্লাহ (সা)-এর ওফাত হয় তখনও সেই পাঁচবার দুধ চোষার (হুকুমের অংশ) সম্বলিত আয়াত তিলাওয়াত করা হইত। 

সহিহ মুসলিম: খণ্ড ৮: হাদিস ৩৪২২
আমরাহ (র) থেকে বর্ণিত, তিনি আয়িশা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, যখন তিনি দুধপানের ঐ পরিমাণ সম্পর্কে আলোচনা করলেন যার দ্বারা হুরমত সাব্যস্ত হয় । আমরাহ বললেন যে, আয়িশা (রাঃ) বলেছিলেন, আল কুরআনে নাযিল হয় নির্ধারিত দশবার দুধপানে, তারপর নাযিল হয় - নির্ধারিত পাঁচবার দুধপানে।”

সুনানু ইবনে মাজাহ্: হাদিস ১৯৪৪ নিকাহ বা বিবাহ অধ্যায়
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রজম সম্পর্কিত আয়াত এবং বয়স্ক লোকেরও দশ ঢোক দুধপান সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হয়েছিল, যা একটি সহীফায় (লিখিত) আমার খাটের নিচে সংরক্ষিত ছিল। যখন রসূলুল্লাহ (সা) ইন্তিকাল করেন এবং আমরা তাঁর ইন্তিকালে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লাম, তখন একটি ছাগল এসে তা খেয়ে ফেলে।

মানে দাঁড়াচ্ছে, কোরআনে রজম বিধান ছিলো, দুধপানের বিধান ছিলো এবং মুহাম্মদের মৃত্যুর পরও তা পালন করা হয়েছে, মুহাম্মদ নিজেও তা পালন করেছেন, করতে বলেছেন; কিন্তু এখন তা কোরআনে নেই! কই গেলো! আল্লাহতালা মুহাম্মদের জন্য যা আবশ্যক করলেন, এখন তা কোরআনে মুসলিমদের জন্য নেই কেন? তার মানে কি এই দাঁড়ায়, আল্লাহতালা সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেছিলেন? মুহাম্মদের হাতে রজমের পাপ আর দুধপান করিয়েছেন আর আমাদের হাত ও মুখকে পাপমুক্ত রাখতে আয়াত গায়েব করে দিয়েছেন! চমৎকার!

কোরআনে আছে 
"আমি তোমাকে পড়িয়ে দেব, যার ফলে তুমি ভুলে যাবে না। আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত। নিশ্চয় তিনি জানেন প্রকাশ্য ও গোপন বিষয়।" সূরা আল আলা (৮৭:৬-৭)

"আমি কোন আয়াত রহিত করলে অথবা বিস্মৃত করিয়ে দিলে
তদপেক্ষা উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন করি।
তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান?" সূরা বাকারা (২:১০৬)

এ দুই আয়াতের মানে কী দাঁড়াচ্ছে: আল্লাহতালা মনে করিয়ে দেন, আবার ভুলিয়েও দেন! কেন বাবা, আগের প্রকাশিত আয়াতে স্থির থাকতে সমস্যা কোথায়, নাকি আপনিও মানুষের মত আগে কী প্রসব করেছিলেন, ভুলে যান! সূরা বাকারা আয়াত ১০৬ বাহানা মাত্র!

সহিহ বুখারী: খণ্ড ৬: অধ্যায় ৬০: হাদিস ১১৬
যায়দ ইবনে সাবিত (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁকে (৪:৯৫) "বসে-থাকা মুমিনরা আর জান-মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদকারীগণ সমান নয়"; আয়াতটি লেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি আমাকে বলে যাচ্ছিলেন এমতাবস্থায় উম্মে মাকতুম (রা) তাঁর কাছে আগমন করলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা) আল্লাহর শপথ, যদি আমি জিহাদে সক্ষম হতাম তা হলে অবশ্যই জিহাদ করতাম। তিনি অন্ধ ছিলেন। এরপর আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূল (সা)-এর উপর ওহী অবতীর্ণ করলেন, এমতাবস্থায় যে তাঁর উরু আমার উরুর উপর ছিল, তা আমার কাছে এতই ভারী অনুভুত হচ্ছিল যে, আমি আমার উরু থেতলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছিলাম। তারপর তাঁর এই অবস্থা কেটে গেল, আর আল্লাহ তাআলা নাযিল করলেন: "অক্ষমদের ব্যতীত বসে-থাকা মুমিনরা আর জান-মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদকারীগণ সমান নয়।"

সহিহ বুখারী: খণ্ড ৬: অধ্যায় ৬১: হাদিস ৫৫৮
আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা) এক ব্যক্তিকে রাতে কুরআন পাঠ করতে শুনে বললেন, আল্লাহ তাকে রহমত করুন। কেননা, সে আমাকে অমুক অমুক সূরার অমুক অমুক আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, যা আমি ভুলতে বসেছিলাম।

সহিহ বুখারী: খণ্ড ৬: অধ্যায় ৬১: হাদিস ৫৫০
আবদুল্লাহ্ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন, এটা খুবই খারাপ কথা যে, তোমাদের মধ্যে কেউ বলবে, আমি কুরআনের অমুক অমুক আয়াত ভুলে গেছি; বরং তাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। সুতরাং, তোমরা কুরআন তিলাওয়াত করতে থাক, কেননা তা মানুষের অন্তর থেকে উটের চেয়েও দ্রুতবেগে চলে যায়।

সহিহ মুসলিম: খণ্ড ৪: হাদিস ১৭৮৭
উবাই ইবনে কাব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মসজিদে ছিলাম। এক ব্যক্তি প্রবশে করে সালাত আদায় করতে লাগল। সে এমন এক ধরলের কিরা-আত করতে লাগল আমার কাছে অভিনব মনে হল। পরে আর একজন প্রবেশ করে তার পূর্ববর্তী ব্যক্তি হতে ভিন্ন ধরনের কিরা-আত করতে লাগল। সালাত শেষে আমরা সবাই রাসুলুল্লাহ (সা) এর কাছে গেলাম। আমি বললাম, এ ব্যক্তি এমন কিরা-আত করেছে যা আমার কাছে অভিনব ঠেকেছে এবং অন্যজন প্রবেশ করে তার পূর্ববর্তী জন হতে ভিন্ন কিরা-আত পাঠ করেছে। তখন রাসুলুল্লাহ (সা) তাদের উভয়কে (কিরা-আত পাঠ করতে) নির্দেশ দিলেন। তারা উভয়েই কিরা-আত পাঠ করল। নবী (সা) তাদের দু'জনের (কিরা-আতের) ধরনকে সুন্দর বললেন। ফলে আমার মনে নবী (সা) এর কুরআনের প্রতি মিথ্যা অবিশ্বাস ও সন্দেহের উন্মেষ দেখা দিল। এমন কি জাহিলী যুগেও আমার এমন খটকা জাগেনি। আমার ভেতরে সৃষ্ট খটকা অবলোকন করে রাসুলুল্লাহ (সা) আমার বুকে সজোরে আঘাত করলেন। ফলে আমি ঘর্মাক্ত হয়ে গেলাম এবং যেন আমি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে মহা মহীয়ান আল্লাহর দিকে দেখছিলাম। নবী (সা) আমাকে বললেন: ওহে উবাই! আমার কাছে জিবরাঈল (আঃ)-কে প্রেরণ করা হয়েছে যে, আমি যেন কুরআন এক হরফে তিলাওয়াত করি। আমি তখন তাঁর কাছে পুনরায় অনুরোধ করলাম আমার উম্মাতের জন্য সহজ করুন। দ্বিতীয়বার আমাকে বলা হল যে, দুই হরফে তা তিলাওয়াত করবে। তখন তাঁর কাছে আবার অনুরোধ করলাম, আমার উম্মাতের জন্য সহজ করে দিতে। তৃতীয়বার আমাকে বলা হল যে সাত হরফে তা তিলাওয়াত করবে এবং যতবার আপনাকে জবাব দিয়েছি তার প্রতিটির বদলে আপনার জন্য একটি সাওয়াল! আমার উম্মাতকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! আমার উম্মাতকে ক্ষমা করুন। আর তৃতীয় প্রার্থনাটি বিলম্বিত করে রেখেছি সে দিনের জন্য যে দিন সারা সৃষ্টি এমন কি ইবরাহীম (আঃ) ও আমার প্রতি আকৃষ্ট হবেন।

সহিহ বুখারী: খণ্ড ৬: অধ্যায় ৬১: হাদিস ৫১৪
উমর ইবনে খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হিশাম ইবনে হাকীম (রা)-কে রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর জীবদ্দশায় সূরা ফুরকান তিলাওয়াত করতে শুনেছি এবং গভীর মনোযোগ সহকারে আমি তার কিরাআত শুনেছি। তিনি বিভিন্নভাবে কিরাআত পাঠ করেছেন; অথচ রাসূলুল্লাহ্ (সা) আমাকে এভাবে শিক্ষা দেননি। এ কারণে সালাতের মাঝে আমি তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উদ্যত হয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু বড় কষ্টে নিজেকে সামলে নিলাম। তারপর সে সালাম ফিরালে আমি চাদর দিয়ে তার গলা পেঁচিয়ে ধরলাম এবং জিজ্ঞেস করলাম, তোমাকে এ সূরা যেভাবে পাঠ করতে শুনলাম, এভাবে তোমাকে কে শিক্ষা দিয়েছে? সে বলল, রাসূলুল্লাহ্ (সা)-ই আমাকে এভাবে শিক্ষা দিয়েছেন। আমি বললাম, তুমি মিথ্যা বলছ। কারণ, তুমি যে পদ্ধতিতে পাঠ করেছ, এর থেকে ভিন্ন পদ্ধতিতে রাসূলুল্লাহ্ (সা) আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন। এরপর আমি তাকে জোর করে টেনে রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর কাছে নিয়ে গেলাম এবং বললাম, আপনি আমাকে সূরা ফুরকান যে পদ্ধতিতে পাঠ করতে শিখিয়েছেন এ লোককে আমি এর থেকে ভিন্ন পদ্ধতিতে তা পাঠ করতে শুনেছি। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। হিশাম, তুমি পাঠ করে শোনাও। তারপর সে সেভাবেই পাঠ করে শোনাল, যেভাবে আমি তাকে পাঠ করতে শুনেছি। তখন আল্লাহর রাসূল বললেন, এভাবেই নাযিল করা হয়েছে। এরপর বললেন, হে উমর! তুমিও পড়। সুতরাং আমাকে তিনি যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন, সেভাবেই আমি পাঠ করলাম। এবারও রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, এভাবেও কুরআন নাযিল করা হয়েছে। এ কুরআন সাত উপ (আঞ্চলিক) ভাষায় নাযিল করা হয়েছে। সুতরাং তোমাদের জন্য যা সহজতর, সে পদ্ধতিতেই তোমরা পাঠ কর।

সহিহ বুখারী: খণ্ড ৬: অধ্যায় ৬১: হাদিস ৫১৩
ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন, জিবরাঈল (আ) আমাকে একভাবে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। এরপর আমি তাকে অন্যভাবে পাঠ করার জন্য অনুরোধ করতে লাগলাম এবং পুনঃ পুনঃ অন্যভাবে পাঠ করার জন্য অব্যাহতভাবে অনুরোধ করতে থাকলে তিনি আমার জন্য পাঠ পদ্ধতি বাড়িয়ে যেতে লাগলেন। অবশেষে তিনি সাত উপ (আঞ্চলিক) ভাষায় তিলাওয়াত করে সমাপ্ত করলেন।

কী, বোঝা যাচ্ছে কিছু? স্বাভাবিক মস্তিস্কগত দুর্বলতার কারণে মানুষ ভুলে যেতেই পারে! এমনকি নবী মুহাম্মদও ভুলে যেতেন! সাথে ভুলে যেতেন আল্লাও! আর সাত সাতটা উপ (আঞ্চলিক) ভাষার কোরআনের খিচুড়ি কত মনে রাখা যায়, বলতে পারেন? ভুল তো হতেই পারে; আল্লাহ বলে কি তিনি মানুষ নন!

হাদীস থেকে কোরআনে যাই এবার: কোরআন থেকেই উদাহরণ টানি তার সঠিকভাবে সংকলিত না হওয়া নিয়ে। নিচের সূরার আয়াতগুলো পড়ুন, ২২০ নং আয়াতের কারণে ২১৬-২১৮ এবং ২১৯, ২২১ নং আয়াতে ব্যাখ্যাসহ উত্তর এসেছে! কিন্তু ভেবে দেখুন সংকলনের সময় কারণ আয়াত রাখা হয়েছে মধ্যে! তেমনি ‍দ্বিতীয় উদাহরনে নিষেধাজ্ঞা ৩৩:৫২ আয়াত অনুমতি ৩৩:৫০-৫১ আয়াতের আগে থাকতে হবে, তা না হলে ইসলামের ইতিহাস অনুসারে মুহাম্মদ হয়ে যাবেন কোরআন আর আল্লার আইন-ভাঙা প্রথম ব্যক্তি!

কোরআন থেকে উদাহরণ:
কারণ ২:২২০ ইয়াহূদী ও নাসারারা তোমার প্রতি রাজী হবে না যে পর্যন্ত না তুমি তাদের ধর্মের আদর্শ গ্রহণ কর। বল, 'আল্লাহর দেখানো পথই প্রকৃত সুপথ এবং তুমি যদি জ্ঞান আসার পরেও এদের ইচ্ছে অনুযায়ী চল, তাহলে তোমার জন্য আল্লাহর ক্রোধ হতে রক্ষা করার মত কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী থাকবে না।'
ব্যাখ্যা ২:২১৬ তারা বলে যে, আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন, তিনি অতি পবিত্র, বরং যা কিছু আকাশসমূহে এবং ভূ-মন্ডলে আছে সমস্তই তাঁর, সকলই তাঁর অনুগত।
ব্যাখ্যা ২:২১৭ আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃজনকারী, যখন কোন কাজ করতে মনস্থ করেন, তখন তার জন্য শুধু বলেন, হয়ে যাও, তক্ষুনি তা হয়ে যায়।
ব্যাখ্যা ২:২১৮ যারা কিছু জানে না তারা বলে, কেন আল্লাহ আমাদের সঙ্গে কথা বলেন না? কিংবা আমাদের নিকট কোন নির্দেশ কেন আসে না? এভাবে আগের লোকেরাও তাদের মতই বলত, এদের অন্তরগুলো একই রকম, আমি দৃঢ় বিশ্বাসীদের জন্য নিদর্শনাবলী পরিষ্কারভাবে বিবৃত করেছি।
ব্যাখ্যা ২:২১৯ আমি তোমাকে সত্যদ্বীনসহ সুসংবাদদাতা এবং ভয় প্রদর্শনকারী হিসেবে প্রেরণ করেছি, জাহান্নামীদের সম্বন্ধে তোমাকে কোন প্রশ্ন করা হবে না।
ব্যাখ্যা ২:২২১ আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি, তারা যথাযথভাবে কিতাব তিলাওয়াত করে, তারাই এতে বিশ্বাস পোষণ করে আর যারা এর প্রতি অবিশ্বাস করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।

কোরআন থেকে উদাহরণ:
অনুমতি ৩৩:৫০ হে নবী! আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীগণকে যাদের মোহরানা তুমি প্রদান করেছ; আর বৈধ করেছি আল্লাহ ফায় (বিনা যুদ্ধে লব্ধ) হিসেবে তোমাকে যা দান করেছেন তার মধ্য হতে যারা তোমার মালিকানাধীন হয়েছে তাদেরকে, আর তোমার চাচার কন্যা ও ফুফুর কন্যাকে, তোমার মামার কন্যা ও তোমার খালার কন্যাকে যারা তোমার সঙ্গে হিজরাত করেছে। আর কোন মুমিন নারী যদি নবীর নিকট নিজেকে নিবেদন করে আর নবী যদি তাকে বিয়ে করতে চায় সেও বৈধ, এটা মুমিনদের বাদ দিয়ে বিশেষভাবে তোমার জন্য যাতে তোমার কোন অসুবিধে না হয়। মুমিনগণের জন্য তাদের স্ত্রী ও দাসীদের ব্যাপারে যা নির্ধারিত করেছি আমার তা জানা আছে। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
অনুমতি ৩৩:৫১ তুমি তাদের যাকে ইচ্ছে সরিয়ে রাখতে পার, আর যাকে ইচ্ছে তোমার কাছে আশ্রয় দিতে পার। আর তুমি যাকে আলাদা করে রেখেছ তাকে কামনা করলে তোমার কোন অপরাধ নেই। এতে অধিক সম্ভাবনা আছে যে, তাদের চক্ষু শীতল থাকবে, তারা দুঃখ পাবে না, আর তুমি তাদের সকলকে যা দাও তাতে তারা সন্তুষ্ট থাকবে। তোমাদের অন্তরে যা আছে আল্লাহ তা জানেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল।
নিষেধাজ্ঞা ৩৩:৫২ অতঃপর আর কোন নারী তোমার জন্য বৈধ নয়। আর তাদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করাও হালাল নয় যদিও তাদের সৌন্দর্য তোমাকে চমৎকৃত করে। তবে তোমার অধিকারভুক্ত দাসীদের ব্যাপারে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। আল্লাহ সব বিষয়ের উপর দৃষ্টি রাখেন।

তাহলে পাঠক, আমরা এখনকার কোরআন হাতে নিয়ে ভাবতেই পারি: বিষয়বস্তু - ২. কোরআন মোটেই সঠিকভাবে সংরক্ষিত নয়! প্রমাণিত। এটিও বিশ্বাস করার দরকার নেই, আপাতত কেবল মাথায় রাখুন বিষয়টি!

বিষয়বস্তু - ৩:
চলুন, আপনাকে (King Fahd Complex for Printing the Holy Quran) মদিনা, সৌদী আরব থেকে প্রকাশিত দুটো কোরআনের মালিক করে দিই। প্রথমেই বলে রাখছি, প্রায় ১৮০ মোগাবাইট ইন্টারনেট খরচ হবে। জিনিস যেটা ভালো, দাম তার একটু বেশি তো হবেই!

হাফস্ (Hafs) সংস্করণ (৭১ মেগাবাইট)

ওয়ারস্ (Warsh) সংস্করণ (১০৮ মেগাবাইট)

মাওলানা সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী সাহেব বলেছেন: যদি আমরা কোরআনের মধ্যে কোনো একটি হরফ নোকতার পার্থক্য দেখতে পাই তাহলে সারা দুনিয়াকে এই অভিনব আবিষ্কারের খবরটি জানানো আমাদের অবশ্যকর্তব্য। মওদুদী সাহেব, আজ বেঁচে থাকলে আপনার খবর ছিলো! পাঠক, ডাউনলোড যখন করেই ফেলেছেন, নিজেই যাচাই করে নিন; ১৮০ মোগাবাইটের একটি পরখ তো করা দরকার! এবার কিন্তু আর কোনো কথা হবে না, বিষয়বস্তু - ১. কোরআন মোটেই একটিমাত্র নয়! প্রমাণিত হয়ে গেলো!

 
ছবি - ০২: যাচাই করে নিন, দুই কোরআনে উচ্চারণে ভিন্নতা আছে কি না?

ছবি - ০৩: যাচাই করে নিন, দুই কোরআনে শব্দের ভিন্নতা আছে কি না?

হাফস্ (Hafs) এবং ওয়ারস্ (Warsh) সংস্করণ দু'টি থেকে উচ্চারণের ভিন্নতা এবং শব্দের ভিন্নতা নিয়ে শ-খানেক করে উদাহরণ টানা যায়! তবে তা বিরক্তিকর হবে ভেবে সংক্ষিপ্ত করছি! আমরা যে হাফস্ (Hafs) সংস্করণ পড়ি, তার মোট আয়াতের সংখ্যা ৬২৩৬ টি! কিন্তু ওয়ারস্ (Warsh) সংস্করণে আয়াতের সংখ্যা ৬২১৪ টি! কী, কিছু বোঝা যাচ্ছে? আমরা কি ভাবতে পারি না: বিষয়বস্তু - ৩. কোরআনগুলোর ভেতরে একাধিক পার্থক্য আছে? প্রমাণিত!

জানি, জানি, একটা লম্বা গল্প না বললে সবকিছুকে প্রমাণিত-প্রমাণিত বলে প্রমাণ করাটা ঠিক পছন্দ হচ্ছে না আপনাদের! তবে চলুন, শুরু করি। প্রথমেই বলে রাখি, গল্পে কিন্তু জটিলতার মাখামাখি থাকবে! আর এটি হবে অনেক অনেক লম্বা!

মুহাম্মদ কখনও মিথ্যা বলতেন না! তিনি যা বিশ্বাস করতেন, সত্য বলে মানতেন, তা-ই তিনি বলতেন! নবী হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করার পর থেকে তিনি নিয়মিত আল্লাহ প্রেরিত বাণী প্রচার করতে শুরু করলেন। কেউ যদি কোনো একটা বিষয় নিয়ে খুব বেশি মগ্ন থাকে, তাহলে মাঝে মাঝে বা নিয়মিত তার মনে হতেই পারে - সেই বিষয়টি তার জীবনে সত্যিই ঘটেছে বা ঘটে চলেছে; ক্ষেত্রবিশেষে কারও কারও কাছে তা দিনের আলোর মত সত্য বলেই প্রতিভাত হয় এবং তা স্থায়ী সত্য স্মৃতি হয়ে থেকে যায় মস্তিস্কে। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় False Memories, ঘুম জড়তা বা Sleep Paralysis ও কখনও কখনও সাধারণ মানুষকে এমন স্থায়ীভাবে সত্য নামের মিথ্যা স্মৃতির জোগান দিতে পারে! এক্ষেত্রে এই মানুষটি যা বলে, তা সত্য, এবং তা তার জীবনে ঘটছে বলেই বিশ্বাসসহ মস্তিস্কে স্মৃতি হিসাবে জমা থাকে! অতএব, মুহাম্মদ কখনও মিথ্যা বলতেন না!

মুহাম্মদ তৎকালীন আরবের প্রতিটি জাতিগোষ্ঠির সাথে কথা বলতেন ও মিশতেন, প্রতি বছর নিয়মিতভাবে তিনি ওকাজ/উকাজের মেলায় যেতেন, সবার সাথে কথা বলে ধর্ম প্রচার করতেন; একাধিক আঞ্চলিক ভাষায় তার কথা বলার দক্ষতা ছিলো প্রসংশনীয়, তিনি ভালোভাবেই জানতেন সিলেট-এর মানুষ সিলেটি ভাষা এবং চট্রগ্রাম-এর মানুষ চাটগাইয়া ভাষা ভালোভাবে বোঝে! কোরআনের ৭টি আঞ্চলিক ভাষায় প্রকাশ এটাই প্রমাণ করে বারবার! তবে যত বড় কিডনিওয়ালা মস্তিস্কের মানুষই হন না কেন, কারও পক্ষে হাজার হাজার False Memories মনে রাখা সম্ভব হয় নয়। হাদীস তাই এটাই প্রমাণ করে, মুহাম্মদ ভুলে যেতেন এবং তার সাথে মুহাম্মদের False Memories-এর আল্লাহও তা ভুলে যেতে বাধ্য হতেন!

মুহাম্মদের সময়ে সম্পূর্ণ কোরানের সংকলনের উদ্যোগ নেয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না, তবে বিভিন্নজনের কাছে ছাল, পার্চমেন্ট, পাতা, হাড় ইত্যাদিতে আয়াত লেখা ছিলো। কথিত আছে, এর সংরক্ষক ছিলেন প্রায় ৪২ জন সাহাবি, যাদের কাতেবে ওহী বলা হত। যদিও খলিফা আলী দাবি করেছিলেন যে, তাঁর কাছে সম্পূর্ণ কোরান আছে, যা কালক্রমিকভাবে সংকলিত ছিল (সেটা থাকলে আমার সিরিজটির কী হতো!), কিন্তু তা প্রমাণিত নয়। মুহাম্মদ নিজে বলতেন যে, তোমরা চার ব্যক্তি থেকে কুরআন শিক্ষা কর - আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ, সালিম, মুআয এবং উবায় ইবনে কাব। (সহিহ বুখারী: খণ্ড: ৬ অধ্যায়: ৬১ হাদিস: ৫২১)

মুহাম্মদের জীবিত থাকাকালীন পুরো কোরআনের হাফেজ বলে কেউ ছিলো না, প্রায় সব সাহাবীই কিছু কিছু অংশ একাধিক আঞ্চলিক ভাষায় জানতেন! একজনের জানার সাথে অন্যজনের মিল ছিলো না খুব একটা; ওপরের হাদীসগুলো প্রমাণ করে, এ নিয়ে হাতাহাতি পর্যন্ত হয়ে যেত! মুহাম্মদের মৃত্যুতে খলিফা উমরের পাগলামী থামাতে খলিফা আবু বকর যে-আয়াত পাঠ করে শোনান, উমরের মনে হয়েছিলো তিনি তা সেদিনই প্রথম শুনছেন! চলুন, একটি হাদিস দেখি, যা প্রমাণ করে, সেই সময় কতজন পুরো কোরআনের হাফেজ ছিলো এবং সেই সাথে এও প্রমাণ করে - খলিফা আবু বকরের তত্ত্বাবধানে করা সংকলনটিও (সহীফা) ত্রুটিহীন ছিলো না!

সহিহ বুখারী: খণ্ড ৬: অধ্যায় ৬০: হাদিস ৩০৭
জায়িদ ইবনে সাবিত (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যখন সহীফা থেকে কুরআন লিপিবদ্ধ করছিলাম তখন সূরা আহযাবের একটি আয়াত খুঁজে পেলাম না, যা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে তিলওয়াত করতে শুনেছি। অবশেষে (অনেক খোঁজার পর) সেটি খুযায়মা আল-আনসারী ব্যতীত অন্য কারও কাছে পেলাম না; যার সাক্ষী রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) দু'জন পুরুষ সাক্ষীর সমান গণ্য করেছেন।

কোরআনের ধারাবাহিকতা প্রসঙ্গে একটি বর্ণনা রয়েছে, জিবরাঈল মুহাম্মদকে বলেছেন, অমুক আয়াতটি সূরা বাকারার ২৮০ নং আয়াতের পর লিপিবদ্ধ করুন। অন্য এক রেওয়াতে তিনি মুহাম্মদকে সূরা কাহফের প্রথম দশটি আয়াত তেলাওয়াত করার মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছেন। এ ধরনের আরো কিছু কিছু রেওয়াত পাওয়া যায়, কিন্তু সামগ্রিকভাবে মুহাম্মদ-এর যুগে কোরআনের সূরা ও আয়াতের সংখ্যা সম্পর্কিত আর তেমন কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। খলিফা আবু বকর-এর যুগেও কোরআনের আয়াতের গণনা হয়েছে এমন কোনো রেওয়াত পাওয়া যায় না। সম্ভবত, সর্বপ্রথম খলিফা উমর-এর যুগেই আয়াত গণনার কাজটি শুরু হয়েছে। খলিফা উমর তারাবীর নামাযের প্রতি রাকাতে ত্রিশ আয়াত করে তেলাওয়াত করার একটা নিয়ম জারি করেছিলেন। অন্যান্য সাহাবীদের মধ্যে খলিফা উসমান, খলিফা আলী, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আনাস, আবুদ্ দারদা, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনে উমর ও উম্মুল মোমেনিন আয়েশা কোরআনের আয়াত সংখ্যা নির্ণয় করেছেন। আয়াতের সংখ্যার মতামতেও অনেক তারতম্য রয়েছে। তবে সাধারণত আয়েশার গণনাকে এ ব্যাপারে বেশি নির্ভরযোগ্য মনে করা হয়। আয়েশা বলেছেন কোরআনে ৬৬৬৬ টি আয়াত আছে, কিন্তু এখনকার যে হাফস্ (Hafs) সংস্করণ আমরা পড়ি, তার মোট আয়াতের সংখ্যা ৬২৩৬ টি! আবার ওয়ারস্ (Warsh) সংস্করণে আয়াতের সংখ্যা ৬২১৪ টি!

মুহাম্মদের মৃত্যুর পরই আরবের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক নবীর আবির্ভাব ঘটে। এদের দমন করতে গিয়ে বহু সাহাবী মারা যান। তখন খলিফা উমরের পরামর্শ ও অনুরোধে প্রথম খলিফা আবু বকর কোরআনকে একত্রে গ্রন্থাকারে সংকলনের উদ্যোগ নেন এবং মুহাম্মদের ঘনিষ্ঠ কোরআন লেখক জায়েদ ইবনে সাবিতকে এ কাজের দায়িত্ব দেন। জায়েদ তখন বলেছিলেন: "এর চাইতে পাহাড় ঠেলে সরানো সহজ কাজ!" (উলুমুল কোরআন-তকিব উসমানি, উলুমুল কোরআন-ড. মাওলানা শামসুল হক সিদ্দিক) পাঠক, ভেবে দেখুন পুরো কোরআনের যদি শত-শত হাফেজ থাকতো, তবে একথা তিনি বলতেন কি? বলা হয়, মুহাম্মদের মৃত্যুর এক-দেড় বছরের মধ্যেই পুরো কোরআন একত্রে গ্রন্থাকারে সংকলনের কাজ সম্পন্ন হয়। খলিফা আবু বকরের পর খলিফা উমর এই কোরআন সংরক্ষণ করেন। তাঁর সময় খেলাফতের সীমানা পারস্য থেকে লিবিয়া এবং আরব সাগর থেকে আজারবাইজান পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। খলিফা উমরের মৃত্যুর পর এই কোরআন তাঁর কন্যা ও উম্মুল মোমেনিন হাফসা-র হেফাজতে সংরক্ষিত হয়। মুহাম্মদের মৃত্যুর ২০ থেকে ২২ বছর সময় পর্যন্ত এটাই ছিলো মূল কোরআন!

সাত আরব্য আঞ্চলিক ভাষায় কোরআন শেখা লোকদের প্রথম লক্ষণীয় দ্বন্দ্ব ঘটে আরমেনিয়া-আজারবাইন যুদ্ধে। এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীরা ছিলেন ইরাকবাসী ও সিরিয়াবাসী মুসলিম। ইরাকবাসীরা কোরআন শিখতেন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ-র উচ্চারণরীতি অনুযায়ী আর সিরিয়াবাসীরা কোরআন শিখতেন উবাই ইবনে কাব-এর উচ্চারণরীতি অনুযায়ী। তারা একে অপরের কোরআন শুনে একে অপরকে কাফের বলে আখ্যায়িত করতে শুরু করলেন। (ইবনে হাজার আল আসকালানী, ফাতহুল বারী, খণ্ড: ৯, পৃ: ১৮)

তৃতীয় খলিফা হযরত উসমানের সময় খেলাফতের আরো বিস্তৃতি ঘটে। তিনি সব অঞ্চলে অভিন্ন পঠনপাঠনরীতি অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে কোরআনের সংস্কার করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি হাফসা-র কাছে সংরক্ষিত কোরআন চেয়ে পাঠান। কোরাইশদের পঠন ও লিখনরীতি অনুসারে কোরআন কপি করার জন্যে প্রধান কাতিব জায়েদ ইবনে সাবিত, আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর, সাঈদ ইবনুল আস, আবদুর রহমান ইবনে হারিস, উবাই ইবনে কাব সহ ১২ জন সাহাবীর একটি দল গঠন করেন। তারা এই কোরআনের কপি সংস্করণ করে নতুন কুরাইশী কোরআন তৈরি করেন। খলিফা উসমান একটি কপি নিজের কাছে এবং একটি মদিনার মহাফেজখানায় রেখে অবশিষ্ট কপিগুলো বিভিন্ন প্রদেশের শাসনকর্তাদের কাছে প্রেরণ করেন। আর মূল কপি ফেরত পাঠান হাফসা-র কাছে। এরপর মারওয়ান বিন হাকাম তাঁর রাজত্বকালে এ কপিটি চাইলে হাফসা তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। হাফসা-এর ইন্তেকালের পর মারওয়ান এ কপি ইবনে উমর (হাফসার ভাই, খলিফা উমরের ছেলে)-এর কাছ থেকে নিয়ে যান। এবং তিনি সেটি জ্বালিয়ে দেন, কারণ তা না হলে হয়ত উসমান-এর খেলাফত আমলে প্রস্তুতকৃত কপির সঙ্গে হাফসা-র কোরআনের পার্থক্যের কারণে অদূর ভবিষ্যতে ফেতনা/দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে; কেননা খলিফা উসমান সাত কেরাতের পরিবর্তে এক কেরাত, আঞ্চলিক একাধিক ভাষার পরিবর্তে কুরাইশী ভাষায় সে কোরআনটি সংকলন করেছেন। (উলুমুল কোরআন-তকিব উসমানি)

অবশেষে আমার উসমানী কোরআন পেলাম! কিন্তু তা তো তবে একটি হবার কথা! তাহলে আজ আপনার সংগ্রহ করা দু'টি সংকলন আসলো কোথা থেকে? আর উসমানী কোরআনের কোনো কপি কি এখনও আছে পৃথিবীতে?

মূল সত্য এই যে, উসমানী সংকলনের কোনো কপি এখন আর পৃথিবীর কোথাও নেই! এখন যা পাওয়া যায়, তাকে কোনোভাবেই উসমানী কোরআন প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি! এমনকি তাসখন্দ কোরআনসহ তুরস্কের তোপকাপি মিউজিয়ামে-এ থাকা রক্তমাখা কোরআনটিও উসমানের নয় বলে প্রমাণিত হয়েছে অনেক আগেই এবং এটি ২০০ হিজরীর দিকে হাতে লিখিত! গোল্ড কোরআনও প্রায় একই সময়কালীন! মোটামুটি সবচেয়ে প্রাচীন কোরআনের যেসব কপি পাওয়া যায়, সেসবকে কোনোভাবেই উসমানী কোরআন হিসাবে দাবি করা যায় না! এমনকি কিছুদিন আগে মদিনায় যে কোরআন প্রদর্শনী করা হয়, সেখানেও উসমানী প্রমাণ সংকলন হিসাবে কোনো কোরআন-কে দাবি করা হয়নি!

 
ছবি - ০৪: মদিনার প্রদর্শনীতে সবচেয়ে প্রাচীন কোরআনের কপি!

২০১৬ সালে মদিনায় চলমান কোরআন প্রদর্শনীতে কোরআনের সর্বপ্রাচীন পাণ্ডুলিপি হিসাবে এটিকে দেখানো হয় (ছবি - ০৪), পাঠককের কাছে প্রশ্ন, আপনাকে বলতে হবে এটি কোন কোরআন? চোখ খোলা রাখলে উত্তর খুঁজে পাবেন এই পর্বেই!

 
ছবি - ০৫: সবচেয়ে প্রাচীন যা পাওয়া সম্ভব!

ছবি - ০৬: তাসখন্দ এবং গোল্ড কোরআনের সাথেও বর্তমানের কোরআনের পার্থক্য রয়েছে!

সাত স্তরে পরিশোধিত জমজমের পানির মত সহজভাবে শেষ করি: আমরা এখন যে দুটো কোরআন পাচ্ছি, তার মূল উৎসের শুরু হয়ত খলিফা উসমান করেছিলেন, কিন্তু তা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে অনেকটাই! কোরআনের বর্তমানের রূপ নেওয়া হয়েছে ৯ জনের ৯ টি ভার্শনের সম্মিলিত রেয়াত/ধারা-কে বিবেচনায় রেখে! আর শতভাগ নিশ্চিত হয়ে খলিফা উসমানের সংস্করণ পর্যন্ত পৌছানো যায়নি বলেই কোরআন দু'টি! পৃথিবীতে মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের পূর্বে কোরআন হাতে লিখেই প্রতিলিপি তৈরি করা হতো। আমার ব্যক্তিগত ধারণা, বহুভাষী লেখকদের হাতে লেখার ধরন ও উচ্চারণ দেখে-শুনে প্রতিলিপি করার কারণেই মুহাম্মদের মৃত্যুর ২০০ বছরের মধ্যেই কোরআনের ৯ টি রেয়াত/ধারা তৈরি হয়ে যায়। মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের পর সর্বপ্রথম জার্মানিতে ১৬৯৪ খ্রিষ্টাব্দে কোরআন মুদ্রিত হয়। মুদ্রিত সেই কোরআনের একটি কপি মিশরের দারুল কুতুবে এখনো সংরক্ষিত আছে। কিন্তু মুসলিম সমাজে সেই মুদ্রিত কপি গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়নি। কেন হয়নি, পাঠক তা হয়ত বুঝতেই পারছেন। মুসলিমদের মধ্যে সর্বপ্রথম মাওলায়ে উসমান কতৃক রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে ১৭৮৭ খৃষ্টাব্দে কোরআন মুদ্রিত হয়।

৯টি রেয়াত/ধারার জনকের নাম, জন্মস্থান এবং মৃত্যুসাল দিয়ে দিচ্ছি:

১. আবদুল্লা ইবনে আমের (দামাস্কাস), মৃত্যু ১১৮ হিজরী
২. আবদুল্লা ইবনে কাসির (মক্কা), মৃত্যু ১২০ হিজরী
৩. আসিম ইবনে আল নুজ্জুদ (কুফা), মৃত্যু ১২৭ হিজরী
৪. আবু আমর আল-বাসরি (বাসরা), মৃত্যু ১৫৪ হিজরী
৫. হামজা আল-যায়াত (কুফা), মৃত্যু ১৫৬ হিজরী
৬. নাফি ইবনে আব্দুল রহমান (মদিনা), মৃত্যু ১৬৯ হিজরী
৭. আল কিছাই (কুফা), মৃত্যু ১৮৯ হিজরী
৮. আলী ইবনে হামজা (কুফা), মৃত্যু ১৮৯ হিজরী
৯. ইয়াকুব আল-হাদরামী, মৃত্যু ২০৫ হিজরী

হাফস্ (Hafs) সংস্করণ এসেছে হাফস্ আল আসাদ-এর রেয়াত থেকে, তিনি তার রেয়াতের জন্য নির্ভর করেছেন ৩. আসিম ইবনে আল নুজ্জুদ (মৃত্যু ১২৭ হিজরী)-এর রেয়াতের ওপর! আর তিনি কুফার বাসিন্দা ছিলেন! এটিই বহুল প্রচলিত, হায় মুহাম্মদ! কোথায় মক্কা-মদিনা, কোথায় কুফা!

ওয়ারস্ (Warsh) সংস্করণ এসেছে উসমান আল-কুতবি আল-মাসরি-এর রেয়াত থেকে, তিনি তার রোয়াতের জন্য নির্ভর করেছেন ৬. নাফি ইবনে আব্দুল রহমান  (মৃত্যু ১৬৯ হিজরী)-এর রেয়াতের ওপর! আর তিনি ছিলেন মদিনার বাসিন্দা! পাঠক, বুঝতে পারছেন কিছু?

 
ছবি - ০৭: কোরআন বিবর্তনের রূপরেখা!
(পূর্ণাকারে দেখতে ছবির ওপরে ক্লিক করতে হবে)
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে কোরআন মুদ্রিত হয় ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে। এরপর মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে নতুনরূপে কোরআনের হাফস্ (Hafs) সংস্করণ সংস্কার করে মুদ্রণ করা হয় ১৯২৩/২৪ সনে। বর্তমানে কোরআন শরিফের সবচেয়ে বড় ছাপাখানা হল (King Fahd Complex for Printing the Holy Quran) মদিনা। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি দৈনিক ৫০ হাজার কপি কোরআন ছাপার ক্ষমতা রাখে। আর এখান থেকেই একসাথে ছাপা হয় হাফস্ (Hafs) ও ওয়ারস্ (Warsh) সংস্করণ!

কোরআন সংকলনের ইতিহাস বলে, সাহাবী ইবনে মাসুদ, উবায় ইবনে কাব, উম্মুল মোমেনিন হাফসা, খলিফা আলী ইবনে আবু তালিব সহ অনেকেই খলিফা উসমানের কোরআন মানতেন না! সাহাবী ইবনে মাসুদ-এর কোরআনের সাথে উসমানী কোরআনের অনেক বিষয়ের মতপার্থক্য ছিলো! অনেক সাহাবী সূরা ফাতিহাকে কোরআনের সূরা মনে করতেন না! কোরআনের শেষ দুটো সূরাকেও মানতেন না কেউ কেউ! কোরআন সংকলন এবং এর ভিন্নতা এবং ভিন্নমত নিয়ে শুধুমাত্র কোরআন-হাদীস-তাফসীর থেকে সূত্র নিয়ে পুরোদমে একটি গবেষণামূলক বই হতে পারে! আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়টি সেদিক নিতে চাইলে মক্কার ট্রেন সাইবেরিয়া চলে যাবে অনায়াসে, আর শীতে গোসল করা খুব কষ্টের! তাই সাইবেরিয়া যাচ্ছি না; তবে কোনো একদিন এসব বিষয় নিয়ে কথা বলার ইচ্ছা রেখে আজকের গল্প শেষ করা যেতেই পারে।

প্রিয় মাওলানা সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী সাহেব, আজকে আমরা সত্যি সত্যি আবিষ্কার করতে পেরেছি:
১. কোরআন মোটেই একটিমাত্র নয়! 
২. কোরআন মোটেই সঠিকভাবে সংরক্ষিত নয়! 
৩. কোরআনগুলোর ভেতরে একাধিক পার্থক্য আছে!

প্রিয় পাঠক, আপনি যদি আমার এই মতের সাথে একমত প্রকাশ করেন, তবে এই খবরটি সবাইকে জানানো অবশ্যকর্তব্য বলে মতামত দিয়েছেন মাওলানা সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী! আমার জন্য না হোক, এই বেচারার ইচ্ছা পূরণের জন্য আপনার কিছু একটা পদক্ষেপ আশা করে শেষ করছি! আর এ পর্বের টাইটেলে থাকা প্রশ্নটি করে থামিয়ে দিচ্ছি ব্যথা হয়ে যাওয়া চোখ আর আঙুল: "এখন থেকে আপনি পড়বেন কোন কেরআন?" 

তথ্যসূত্র প্রাপ্তি:
১. কোরআন হাফস্ (Hafs) সংস্করণ
২. কোরআন ওয়ারস্ (Warsh) সংস্করণ
৩. হাদীস সংকলন সহীহ বুখারী
৪. হাদীস সংকলন সহীহ মুসলিম
৫. হাদীস সংকলন মুয়াত্তা মালিক
৬. হাদীস সংকলন সুনানু ইবনে মাজাহ্
৭. তাফসীর ইবনে কাসির
৮. তাফসীর তাফহীমুল কোরআন
৯. উলুমুল কোরআন, তকিব উসমানি
১০.উলুমুল কোরআন, ড. মাওলানা শামসুল হক সিদ্দিক
১১. ইবনে হাজার আল আসকালানী, ফাতহুল বারী
১২. কোরআন হাদীস সংকলনের ইতিহাস-এ কে এম ইনামুল হক
১৯. The History of the Quranic Text-M.M Al-Azami
২০. Daleel Al-Hayran Fil Kash a’n Ayaay Al-Quran
২১. Al-Talkhees Fil Qiraat Al-Thaman - Abu Ma’shar Al-Tabari (Died 478 A.H.)
২২. M. Fethullah Gülen, Questions This Modern Age Puts to Islam (Izmir: Kaynak, 1993)
২৩. Alphonse Mingana, “Three Ancient Korans,” in Ibn Warraq, The Origins of the Koran
২৪. As-Suyuti, Al-Itqan fi Ulum al-Qur'an, 525, in Gilchrist, Jam' Al-Qur'an.
২৫. Ibn Warraq, ed., What the Koran Really Says (Amherst, NY: Prometheus, 2002),
২৬. The Cambridge Companion to the Qur'an (Cambridge: Cambridge University Press, 2006)
২৭. AL-Qiraat Al-Ashr Al-Mutawatira, by Sheikh Mohammed Rajih (Published by Dar Al-Mahajir)

1 টি মন্তব্য:

  1. Salut ছাড়া কোন কথা হবেনা।
    আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। - TruthToSaveGeneration.

    উত্তরমুছুন