আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

বুধবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৭

চিঠি-হুমকি - ৬: সংকটে হিরাক্লিয়াস - ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া!: কুরানে বিগ্যান (পর্ব-১৬৭): ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ – একশত একচল্লিশ

লিখেছেন গোলাপ

(আগের পর্বগুলোর সূচী এখানে)

"যে মুহাম্মদ (সাঃ) কে জানে সে ইসলাম জানে, যে তাঁকে জানে না সে ইসলাম জানে না।"

স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর যে চিঠিটি রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াসের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য দিহায়া বিন খালিফা আল-কালবি নামের তাঁর এক অনুসারীকে বসরার শাসনকর্তা ঘাসানিদ গোত্র প্রধান শামির (Shamir) এর কাছে পাঠিয়েছিলেন, সেই চিঠিটি বসরার শাসনকর্তার এক পত্রবাহক মারফত সম্রাট হিরাক্লিয়াসের কাছে পৌঁছার সময়টিতে সম্রাট হিরাক্লিয়াস কী উদ্দেশ্যে তখন বাণিজ্য-কর্মে সিরিয়ায় অবস্থিত কুরাইশ দলপতি আবু সুফিয়ান ইবনে হারব ও তাঁর সঙ্গীদের তার দরবারে ধরে নিয়ে এসেছিলেন; সেই দরবারে উপস্থিত সকল প্রবীণ সভাসদদের উপস্থিতিতে হিরাক্লিয়াস আবু সুফিয়ান-কে কী কী প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিলেন, অতঃপর তিনি সেখানে কী অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন; অতঃপর তিনি যখন মুহাম্মদের চিঠিটি তার দরবারে উপস্থিত প্রবীণ বিশিষ্টজনদের পাঠ করে শুনিয়েছিলেন, তখন সেখানে কী পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিলো; সেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে আবু সুফিয়ান ফিরে আসার প্রাক্কালে কী উক্তিটি করেছিলেন; হিরাক্লিয়াসের দরবারে প্রদত্ত আবু-সুফিয়ানের বেশ কিছু জবাব সত্য হলে তা কীভাবে নিশ্চিতরূপেই মুহাম্মদকে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করে - ইত্যাদি বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে।

আল-তাবারীর (৮৩৮-৯২৩ খ্রিষ্টাব্দ) অব্যাহত বিস্তারিত বর্ণনা: [1] [2] 


'দিহায়া আল-কালবি মারফত হিরাক্লিয়াসের কাছে আল্লাহর নবীর চিঠিটি ছিল এই:

দয়ালু ও করুণাময় আল্লাহর নামে।
আল্লাহর নবী মুহাম্মদের পক্ষ থেকে রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াসের প্রতি:  

যে সঠিক পথের অনুসরণ করে, তার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। জানানো যাইতেছে: “বশ্যতা স্বীকার করো, তাহলে তুমি হবে নিরাপদ [3]'। যদি তুমি বশ্যতা স্বীকার করো, তবে আল্লাহ তোমাকে দ্বিগুণ পুরস্কার দিবে। কিন্তু যদি তুমি তা প্রত্যাখ্যান করো, চাষীদের পাপ ('অর্থাৎ, তোমার প্রজাদের') তোমার উপর বর্তাইবে।"’ [4] [5] ------

ইবনে হুমায়েদ < সালামাহ < মুহাম্মদ ইবনে ইশাক < ইবনে শিহাব আল-যুহরি হইতে বর্ণিত, যিনি বলেছেন:

আবদুল মালিক বিন মারওয়ান [উমাইয়া খলিফা মারওয়ান ইবনে আল-হাকাম পুত্র (পর্ব- পর্ব-১৫৮)] এর শাসন আমলে [৬৮৫-৭০৫ সাল] এক খ্রিষ্টান যাজকের সঙ্গে আমার সাক্ষাত হয়েছিল, তিনি আমাকে বলেছেন যে, তিনি আল্লাহর নবী ও হিরাক্লিয়াসের মধ্যে যে ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল, সে ব্যাপারে অবগত আছেন।

সেই যাজকের বর্ণনা মতে:
যখন হিরাক্লিয়াস আল্লাহর নবীর চিঠিটি দিহায়া বিন খালিফা মারফত প্রাপ্ত হন, তিনি তা গ্রহণ করেন ও তা তার দুই উরু ও পাঁজরের মাঝখানে রাখেন [পর্ব-১৬১]। অতঃপর তিনি লোকটির কার্যকলাপ, তার বর্ণনা ও তার কাছ থেকে তিনি যে পত্রটি পেয়েছেন, সে বিষয়গুলো জানিয়ে রোমের (Rome) এক লোকের কাছে চিঠি লেখেন, লোকটি হিব্রু ভাষায় তারা যে জ্ঞানার্জন করতেন, সে বিষয়ে পড়াশোনা করতেন। প্রতি উত্তরে রোম সম্রাট তাকে লিখে জানান: "সে হলো সত্যিই সেই নবী, যার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। এই ব্যাপারে কোনোই সন্দেহ নেই। তুমি তাকে অনুসরণ করো ও তাকে বিশ্বাস করো।"

অতঃপর হিরাক্লিয়াস তার পক্ষ থেকে এই আদেশ জারি করেন যে, রোমান কমান্ডারদের যেন তার প্রাসাদোপম ভবনে সমবেত করা হয়, অতঃপর তার দরজাগুলো যেন বন্ধ করে দেয়া হয়। তিনি তার ওপরের চেম্বার থেকে নিচে তাদের দিকে দৃষ্টিপাত করেন  তিনি তাদের ভয়ে ছিলেন ভীষণ ভীত-সন্ত্রস্ত - ও বলেন:

"হে রোমান জনগণ, কিছু ভাল কাজের জন্য আমি তোমাদের একত্রিত করেছি। আমি এই লোকটির চিঠি পেয়েছি, সে আমাকে তার ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। আল্লাহর কসম, সত্যিই সে হলো সেই নবী, যার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি ও যাকে আমরা খুঁজে পাই আমাদের গ্রন্থে। এসো, আমরা তাকে অনুসরণ করি ও তাকে বিশ্বাস করি, যাতে আমরা পৃথিবীর ইহকাল ও পরকালের জীবনের নিরাপত্তা পেতে পারি।"

কোনোরূপ ব্যতিক্রম ছাড়া, তাদের প্রত্যেকে রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে ভবনটি থেকে প্রস্থান করার জন্য দ্রুতবেগে দরজাগুলোর দিকে ধাবিত হয়, কিন্তু তারা দেখতে পায় যে, তারা তালাবন্ধ অবস্থায় আছে।

হিরাক্লিয়াস বলেন, "তাদেরকে আমার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে এসো" - তিনি তাদের ভয়ে ছিলেন ভীষণ ভীত-সন্ত্রস্ত - অতঃপর বলেন, "হে রোমান জনগণ, আমি তোমাদের কাছে যে ভাষণটি দিয়েছি, তার উদ্দেশ্য ছিল এই যে, আমি দেখতে চেয়েছিলাম, এই ব্যাপারটির পর তোমরা তোমাদের ধর্মে কী পরিমাণ একনিষ্ঠ। এখন যা দেখলাম, তাতে আমি তোমাদের ব্যাপারে সন্তুষ্ট।"

তারা তার সম্মানে তার কাছে নত হয়; তিনি ভবনের দরজাগুলো খুলে দেওয়ার আদেশ দেন ও তারা প্রস্থান করে।'

‘ইবনে হুমায়েদ < সালামাহ < মুহাম্মদ ইবনে ইশাক < এক জ্ঞানী ব্যক্তি হইতে বর্ণিত: যখন দিহায়া বিন খালিফা আল্লাহর নবীর চিঠিটি হিরাক্লিয়াসের কাছে পোঁছান, তিনি দিহায়া-কে বলেন:

"হায়, ঈশ্বরের কসম, আমি জানি যে, তোমাদের নেতা হলো একজন নবী, যাকে প্রেরণ করা হয়েছে, সে হলো সেই যার জন্য আমরা অপেক্ষা করছিলাম ও আমাদের গ্রন্থে যার বিষয়ে উল্লেখ আছে; কিন্তু রোমানদের ভয়ে আমি ভীষণ ভীত-সন্ত্রস্ত; তা না হলে আমি তার অনুসরণ করতাম। তুমি যাজক দাঘাতির (Daghatir) এর কাছে যাও ও তাকে তোমাদের নেতার বিষয়ে বলো; কারণ, ঈশ্বরের কসম, রোমানদের কাছে তার মর্যাদা ও বক্তব্য আমার মর্যাদা ও বক্তব্যের চেয়ে অনেক বেশি। দেখো, সে তোমাকে কী বলে।"  

তাই দিহায়া দাঘাতিরের কাছে গমন করেন ও তিনি আল্লাহর নবীর কাছ থেকে হিরাক্লিয়াসের কাছে কী জিনিসটি নিয়ে এসেছেন ও তাতে তিনি কী সমন জারী করেছেন, তা তাকে অবহিত করান। দাঘাতির বলেন,

"ঈশ্বরের কসম, তোমাদের নেতা হলো একজন নবী, যাকে প্রেরণ করা হয়েছে। আমরা তাকে জানি তার বিবরণের পরিপ্রেক্ষিতে ও আমরা তার নাম খুঁজে পাই আমাদের গ্রন্থে।" 

অতঃপর দাঘাতির ভিতরে প্রবেশ করেন, যে কালো লম্বা পোশাকটি তিনি পরিধান করে ছিলেন তা পরিত্যাগ করেন, সাদা পোশাক পরিধান করেন, তার জিনিসপত্রগুলো সঙ্গে নেন, অতঃপর রোমানরা যখন তাদের চার্চে অবস্থান করছিল, তখন তিনি তাদের সম্মুখে এসে হাজির হন। তিনি বলেন, 

"হে রোমান জনগণ, 'আহমদ’ এর কাছ থেকে একটি চিঠি আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে, সে আমাদেরকে ঈশ্বরের দিকে আহ্বান করেছে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নাই ও 'আহমদ' হলো তার বান্দা ও রসূল।" [6] 

তারা একত্রে লাফিয়ে ওঠে তাকে আক্রমণ করে ও তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। 

দিহায়া যখন হিরাক্লিয়াসের কাছে ফিরে আসে ও তাকে খবরটি জানায়, হিরাক্লিয়াস তাকে বলেন, "আমি তোমাকে বলেছিলাম যে আমরা তাদের ভয়ে ভীষণ ভীত-সন্ত্রস্ত - আর, ঈশ্বরের কসম, দাঘাতিরের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা ও তার কথার প্রতি তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা আমার কথার চেয়ে ছিল অনেক বেশি!"’

ইমাম বুখারী (৮১০-৮৭০ সাল), ইমাম মুসলিম (৮২১-৮৭৫ সাল) ও ইমাম তিরমিজীর (৮২৪-৮৯২ সাল) বর্ণনা: [7] [8] [9]

[ইমাম বুখারী (১:১:৬), ইমাম মুসলিম (১৯:৪৩৮০) ও ইমাম তিরমিজী (১১:০০৬) তাঁদের নিজ নিজ হাদিস গ্রন্থে হিরাক্লিয়াসের কাছে মুহাম্মদের চিঠি প্রসঙ্গে যে উপাখ্যান লিপিবদ্ধ করেছেন, তা ওপরে বর্ণিত বর্ণনারই অনুরূপ। পার্থক্য এই যে: তাঁদের কেউই যাজক দাঘাতির-কে পিটিয়ে হত্যা করা ঘটনাটির কোনো উল্লেখই করেননি! ইমাম বুখারী তাঁর বর্ণনায় শুধু কমান্ডারদের তালাবন্ধ করা ঘটনাটির উল্লেখ করেছেন; অন্যদিকে, ইমাম মুসলিম ও ইমাম তিরমিজী তাঁদের বর্ণনায় এই ঘটনারও কোনো উল্লেখ করেননি।]

ইমাম বুখারীর বর্ণনায় বাইজেনটাইন কমান্ডারদের তালাবন্ধ করা ঘটনাটি হলো এই:
পূর্ব প্রকাশিতের পর: 

'-------অতঃপর হিরাক্লিয়াস তাকে আরবদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন। বার্তাবাহক জবাবে বলে, 'আরবরাও খৎনা প্রথা পালন করে [পর্ব-১৬৫]।'

(এ কথা শোনার পর) হিরাক্লিয়াস মন্তব্য করেন যে, আরবদের সার্বভৌমত্ব কায়েম হয়েছে। অতঃপর হিরাক্লিয়াস রোমে তার এক বন্ধুর কাছে চিঠি লিখেন, যিনি ছিলেন হিরাক্লিয়াসের মতই জ্ঞানী। অতঃপর হিরাক্লিয়াস হিমস (সিরিয়ার একটি শহর) এ ফিরে যাওয়ার জন্য রওনা হন, তিনি সেখানেই অবস্থান করেন যতদিনে না তার চিঠিটির জবাব বন্ধুটির কাছ থেকে তার কাছে এসে পৌঁছে; বন্ধুটি তার অভিমতের সাথে একমত হয়ে জানায় যে, নবীর আগমন ঘটেছে ও সত্য হলো এই ব্যক্তিটিই হলো সেই নবী। এর পরিপ্রেক্ষিতে হিরক্লিয়াস বাইজেনটাইনের সকল উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের হিমসে অবস্থিত তার প্রাসাদে আমন্ত্রণ করেন। যখন তারা সেখানে একত্রিত হয়, তিনি আদেশ করেন যে, তার প্রাসাদের সকল দরজাগুলো যেন বন্ধ করে দেয়া হয়। অতঃপর তিনি বাহিরে আসেন ও বলেন,

"হে বাইজেনটাইনরা, যদি সফলতায় তোমাদের আকাঙ্ক্ষা হয়ে থাকে, যদি তোমরা সঠিক পথের সন্ধান অন্বেষণ করো ও তোমাদের সাম্রাজ্য কায়েম রাখতে চাও তবে তোমরা এই নবীর প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার করো (অর্থাৎ, ইসলাম গ্রহণ করো)।"

(হিরাক্লিয়াসের এই অভিমতটি শোনার পর) লোকরা অনাগারের ['Onager' -সবচেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন স্তন্যপায়ী পশু, ঘণ্টায় যার গতিবেগ ৪০-৪৩ মাইল] মত দ্রুতবেগে প্রাসাদের দরজার দিকে দৌড়াতে থাকে, কিন্তু তারা দেখতে পায় যে দরজাগুলো হলো বন্ধ। ইসলামের প্রতি তাদের ঘৃণার বিষয়টি হিরাক্লিয়াস উপলব্ধি করতে পারেন; যখন তিনি তাদের ইসলাম গ্রহণের আশা ছেড়ে দেন, তিনি আদেশ জারি করেন যে, তাদেরকে যেন ফিরিয়ে আনা হয়।

(যখন তারা ফিরে আসে) তিনি বলেন, "যা কিছু তোমাদের আগে বলা হয়েছে, তার কারণ ছিল এই যে, তোমাদের বিশ্বাসের দৃঢ়তা পরীক্ষা করা; আর আমি তা দেখেছি।"  

লোকেরা তার সম্মুখে নত হয়ে প্রণাম করে ও তার প্রতি হয় প্রসন্ন, আর এটিই ছিলো হেরাক্লিয়াসের (বিশ্বাসের সাথে সম্পৃক্ত) উপাখ্যানের সমাপ্তি।'

- অনুবাদ, টাইটেল ও [**] যোগ - লেখক।

>>> আদি উৎসের ওপরে বর্ণিত বর্ণনা ও গত পর্বের আলোচনার বিশদ পর্যালোচনায় আমরা নিম্নলিখিত তথ্যগুলো খুঁজে পাই:

আবু সুফিয়ানের সাথে কথোপকথন শেষে যখন হিরাক্লিয়াস তার দরবারে উপস্থিত গণ্যমান্য পরিষদদের উপস্থিতিতে তার “অভিমত” (“--সে নিশ্চিতই আমার পায়ের তলার মাটি জোরপূর্বক কেড়ে নেবে; সে হলো সত্যিই সেই নবী যার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি ও যাকে আমরা খুঁজে পাই আমাদের গ্রন্থে'--") ব্যক্ত করেছিলেন ও মুহাম্মদের চিঠিটি তার পরিষদদের পড়ে শুনিয়েছিলেন, তখন সেখানে ভীষণ চিৎকার ও শোরগোল শুরু হয়ে গিয়েছিল। এই ভীষণ চিৎকার ও শোরগোল প্রত্যক্ষ করার পর আবু সুফিয়ানের উক্তি ছিল, "ইবনে আবু কাবশাহর (মুহাম্মদ) ব্যাপারটি এতই প্রকট হয়ে উঠেছে যে বাইজেনটাইন সম্রাট পর্যন্ত এখন তার ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত।”  আদি উৎসের ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় যে বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট, তা হলো, হিরাক্লিয়াসের সেই অভিমতের সাথে তার পরিষদবর্গের কেউই একমত পোষণ করেননি, রাজ দরবার অভ্যন্তরের ভীষণ চিৎকার ও শোরগোল ছিল সেই কারণেই! হিরাক্লিয়াস যে কারণে ভীত-সন্ত্রস্ত ছিলেন, তা হলো মুহাম্মদের সেই চিঠি-হুমকি, যার প্রমাণ হলো, পরবর্তীতে তার সকল উচ্চপদস্থ পরিষদবর্গের উদ্দেশ্যে হিরাক্লিয়াসের ঘোষণা:

"হে বাইজেনটাইনরা, যদি সফলতায় তোমাদের আকাঙ্ক্ষা হয়ে থাকে, যদি তোমরা সঠিক পথের সন্ধান অন্বেষণ করো ও তোমাদের সাম্রাজ্য কায়েম রাখতে চাও, তবে তোমরা এই নবীর প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার করো [বুখারী: ১:১:৬]।" 

অতঃপর, সম্রাট হিরাক্লিয়াস রোমে বসবাসকারী তার বন্ধুর কাছ থেকে তার চিঠির জবাব পাওয়ার পর যখন বাইজেনটাইনের সকল উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ‘হিমসে’ অবস্থিত তার রাজপ্রাসাদে ডেকে নিয়ে গিয়ে আবারও তার সেই অভিমত প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন, তখন তিনি তার এই উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের ভয়ে ছিলেন ভীষণ ভীত-সন্ত্রস্ত! তিনি তাদের ভয়ে এতটায় ভীতসন্ত্রস্ত ছিলেন যে, তিনি তাদের একত্রিত করে প্রাসাদের সকল দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন, তাদের সম্মুখে না এসে ওপরের চেম্বার থেকে মুহাম্মদ প্রসঙ্গে তার সেই অভিমত আবার ও প্রকাশ করে ঐ লোকদের-কে মুহাম্মদের বশ্যতা স্বীকার করে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার সেই ভাষণের পর যখন তার সকল পরিষদবর্গ রাগে-দুঃখে তার প্রাসাদ থেকে দ্রুতবেগে পলায়নের চেষ্টা করেছিলেন ও তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে তার পরিষদবর্গের কেউই তার এই অভিমতের সাথে একমত নন, তিনি তাদেরকে আবার তার দরবারে ডেকে নিয়ে গিয়ে যে মিথ্যাভাষণের মাধ্যমে তাদেরকে আশ্বস্ত করেছিলেন, তা হলো:

"যা কিছু তোমাদের আগে বলা হয়েছে, তার কারণ ছিল এই যে, তোমাদের বিশ্বাসের দৃঢ়তা পরীক্ষা করা!" 

আদি উৎসের ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় আর যে বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট, তা হলো, হিরাক্লিয়াস শুধু যে তার এই অভিমত বাইজেনটাইনের সকল উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সম্মুখে প্রকাশ করার ব্যাপারেই ভীষণ ভীত-সন্ত্রস্ত ছিলেন তাইই নয়, তিনি তার প্রজাদের সম্মুখেও তার এই অভিমত প্রকাশ করার বিষয়ে এতটায় ভীত-সন্ত্রস্ত ছিলেন যে, তিনি দিহায়া বিন খালিফা-কে পাঠিয়েছিলেন যাজক দাঘাতিরের কাছে; এই কারণে যে রোমানদের কাছে দাঘাতিরের মর্যাদা ও বক্তব্য ছিলো তার মর্যাদা ও বক্তব্যের চেয়ে অনেক বেশী।

তথাপি, যখন দাঘাতির সেখানকার জনগণদের সম্মুখে হিরাক্লয়াসের সেই অভিমতেরই হুবহু অভিমত প্রকাশ করেছিলেন, দাঘাতির গণপিটুনির শিকার হয়ে খুন হয়েছিলেন! 

প্রশ্ন হলো,
"বাইজেনটাইন জনগণ সম্মুখে হিরাক্লিয়াসের অভিমতের হুবহু অভিমত প্রকাশ করার কারণে যেখানে হিরাক্লিয়াসের চেয়েও উচ্চ-মর্যাদাশালী দাঘাতির নামের এক যাজক-কে বাইজেনটাইন জনগণ গণপিটুনিতে হত্যা করেছিলেন, তথাপি কী কারণে ইসলাম বিশ্বাসী পণ্ডিত ও অপণ্ডিতরা হিরাক্লিয়াসের এই উপাখ্যানটি সাধারণ সরলপ্রাণ অজ্ঞ মুসলমান ও অমুসলমানদের উদ্দেশ্যে বয়ান করে 'মুহাম্মদের নবুয়তের সত্যতা' প্রমাণের চেষ্টা করেন?"

জবাব হলো, 
"আল্লাহর রেফারেন্সে মুহাম্মদের এক 'উদ্ভট দাবির' সত্যতা প্রমাণ করার চেষ্টা।" 

মুহাম্মদের ভাষায় সেই দাবীটি হলো,
৬১:৬ - "স্মরণ কর, যখন মরিয়ম-তনয় ঈসা (আঃ) বললঃ হে বনী ইসরাইল! আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর প্রেরিত রসূল, আমার পূর্ববর্তী তওরাতের আমি সত্যায়নকারী এবং আমি এমন একজন রসূলের সুসংবাদদাতা, যিনি আমার পরে আগমন করবেন। তাঁর নাম আহমদ। অতঃপর যখন সে স্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে আগমন করল, তখন তারা বললঃ এ তো এক প্রকাশ্য যাদু।"

>> মুহাম্মদ দাবি করেছেন যে, তিনিই হলেন সেই 'আহমদ'। বাইবেল মুহাম্মদের এই দাবি সমর্থন করে কি না, সে বিতর্কে না গিয়েও যা আমরা নিশ্চিত জানি, তা হলো, আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিব পুত্রের নাম হলো "মুহাম্মদ", আহমদ নয়। 

‘আহমদ’ নামটি অবশ্যই ‘মুহাম্মদ’ নামটির মতই এক ব্যক্তিনাম (proper name)। ব্যুৎপত্তিগতভাবে, এ দু'টি শব্দই আদি শব্দ 'হামদ' এর বিশেষণ; উভয় শব্দেরই মানে হলো "অত্যন্ত প্রশংসিত।" বিশেষণে মিল থাকার কারণেও যে কারণে আবদুল্লাহ পুত্র মুহাম্মদ নিজেকে "আহমদ" রূপে দাবি করতে পারেন না, তা হলো, তাঁর নিজেরই রচিত জবানবন্দি 'কুরান'! তাঁর রচিত কুরান সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, অবিশ্বাসীরা তাঁকে জানতেন এক "মিথ্যাবাদী, উন্মাদ ও যাদুগ্রস্ত" ব্যক্তি হিসেবে (পর্ব-১৮), "অত্যন্ত প্রশংসিত" ব্যক্তি হিসাবে নয়। সে ক্ষেত্রেও তাঁর এই দাবি গ্রহণযোগ্য নয়! সে কারণেই, বোধ করি, রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াস ও যাজক দাঘাতিরের "সার্টিফিকেট সমৃদ্ধ" এই উপাখ্যানটি ইসলাম বিশ্বাসী-পণ্ডিত ও অপণ্ডিতদের কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ!

ইসলামী ইতিহাসের ঊষালগ্ন থেকে আজ অবধি প্রায় প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে ইতিহাসের এ সকল অমানবিক অধ্যায়গুলো যাবতীয় চতুরতার মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে এসেছেন। বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় বাংলা অনুবাদের সাথে আল-তাবারীর প্রাসঙ্গিক মূল ইংরেজি অনুবাদের অংশটিও সংযুক্ত করছি:

The relevnat narratives of Al-Tabari (838-923 AD):

‘----According to the bishop: When Heraclius received the letter of the Messenger of God via Dihyah b. Khalifah, he took it and put it between his thighs and flanks. Then he wrote to a man in Rome who used to read from the Hebrew what they used to read, mentioning the affair of the man, describing him, and informing him of what he had received from him. The ruler of Rome wrote back to him"He is indeed the prophet we have been awaiting. There is no doubt about it. Follow him, and believe him." Heraclius then gave orders to gather the commanders of the Romans for him in a palatial building, and he ordered its doors to be closed on them. He looked down on them from an upper chamber of his he was mortally afraid of them - and said: "People of the Romans, I have assembled you for something good. I have received this man's letter calling me to his religion. By God, he is indeed the prophet whom we have been awaiting and whom we find in our books. Come, let us follow him and believe him, that our life in this world and the next may be secure." Without exception they snorted angrily and hastened to the doors of the building to leave it, but they found that they had been locked. Heraclius said, "Bring them back to me" - he was mortally afraid of them - and he said: "People of the Romans, I spoke to you the speech I spoke to see how steadfast you are in your religion because of this affair that has occurredNow I have seen what gladdens me on your part." They fell down in obeisance to him; he ordered the doors of the building to be opened, and they departed.

According to Ibn Humayd-Salamah-Muhammad b. Ishaq - a learned person: Heraclius said to Dihyah b. Khalifah when the latter brought him the letter of the Messenger of God: "Alas, by God, I know that your master is a prophet who has been sent and that he is the one whom we have been awaiting and whom we find in our book, but I am mortally afraid of the Romans; but for that, I would follow him. Go to Daghatir the bishop, and tell him of the affair of your master, for he, by God, is greater among the Romans than I, and his word has more authority with them. See what he says to you.” So Dihyah went to Daghatir and told him what he had brought to Heraclius from the Messenger of God and to what he was summoning him. Daghatir said: “Your master, by God, is a prophet who has been sent. We know him by his description, and we find him by name in our books.” Daghatir then went inside, laid off the black robes he was wearing, put on white ones, took his staff, and came out before the Romans while they were in the church. “People of the Romans,” he said, “a letter has come to us from Ahmad, summoning us to God. I bear witness that there is no god but God and that Ahmad is his servant and messenger.” As one man they leaped up, attacked him, and beat him to death. When Dihyah returned to Heraclius and told him the news, Heraclius said to him, “I told you that we are in mortal fear of them  and Daghatir, by God, was greater in their estimation, and his word more authoritative than mine!”’

(চলবে)

[কুরানের উদ্ধৃতি সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ (হারাম শরীফের খাদেম) কর্তৃক বিতরণকৃত বাংলা তরজমা  থেকে নেয়া, অনুবাদে ত্রুটি-বিচ্যুতির দায় অনুবাদকারীর।  কুরানের ছয়জন বিশিষ্ট ইংরেজি অনুবাদকারীর ও চৌত্রিশ-টি বিভিন্ন ভাষায় পাশাপাশি অনুবাদ এখানে]

তথ্যসূত্র ও পাদটীকা: 

[1] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৮, ইংরেজী অনুবাদ: Michael Fishbein, University of California, Los Angeles, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-7914-3150—9 (pbk), পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৬৫-১৫৬৭; বিনামূল্যে ডাউনলোড লিঙ্ক:

[2] অনুরূপ বর্ণনা: “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৬৫৫-৬৫৬; বিনামূল্যে ডাউনলোড লিঙ্ক:

[3] Ibid আল-তাবারী, নোট নম্বর ৪৪৩, পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৬৫
'আসলিম তাসলিম'- আরবি এই শব্দের সাধারণ অর্থ হলো, 'মুসলমান হও [অর্থাৎ, ইসলাম গ্রহণ করো] তাহলে তুমি হবে নিরাপদ।”

[4] ] Ibid আল-তাবারী, নোট নম্বর ৪৪৪, পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৬৫
চাষীদের পাপ - ‘আরবি মূল গন্থে এই অংশে যে 'পাদটীকা' উল্লেখ আছে তা হলো: "অর্থাৎ, এই আচরণের জন্য (the bearing of it)।" A. Guillaume মতে (ibid ইবনে ইশাক - পাদটীকা, পৃষ্ঠা ৬৫৫), 'চাষীদের পাপ অর্থে এখানে সম্ভবত: বাইবেলের Matthew 21:33-41 অংশের দুর্নীতিপরায়ণ চাষীদের দৃষ্টান্তের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।---

[5] সহি বুখারী: ভলুম ৪, বই নম্বর ৫২, হাদিস নম্বর ১৮৭
‘Narated By 'Abdullah bin Abbas: Allah's Apostle wrote a letter to Caesar saying, "If you reject Islam, you will be responsible for the sins of the peasants (i.e. your people)."


[6] Ibid আল-তাবারী, নোট নম্বর ৪৫২, পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৬৭
‘আহমদ’ নামটি অবশ্যই মুহাম্মদ নামটির মতই 'ব্যক্তিনাম’ হিসাবে ধরা উচিত। ব্যুৎপত্তিগতভাবে এই দুটি শব্দই হলো আদি শব্দ 'হামদ' এর বিশেষণ ও উভয় শব্দেরই মানে হলো "অত্যন্ত প্রশংসিত।" দাঘাতিরের আচরণে প্রতীয়মান হয় যে তিনি আশা করেছিলেন যে উপস্থিত জনতা 'আহমদ' নামটি চিনতে পারবে, যা কুরানে (৬১:৬) উল্লেখ আছে, যেখানে উল্লেখ আছে যে যিশু ইহুদিদের সুসংবাদ দিয়ে বলেছেন, "আমার পরে এমন একজন নবী আসবে, যার নাম হবে আহমদ"; যার অনুবাদ কেউ এ ভাবেও করতে পারেন, "যার নাম হবে আরো প্রশংসনীয়।"

[7] সহি বুখারী: ভলুম ১, বই নম্বর ১, হাদিস নম্বর ৬  
এই পর্বের প্রাসঙ্গিক অংশ: ‘----(After hearing that) Heraclius remarked that sovereignty of the 'Arabs had appeared. Heraclius then wrote a letter to his friend in Rome who was as good as Heraclius in knowledge. Heraclius then left for Homs. (a town in Syrian and stayed there till he received the reply of his letter from his friend who agreed with him in his opinion about the emergence of the Prophet and the fact that he was a Prophet. On that Heraclius invited all the heads of the Byzantines to assemble in his palace at Homs. When they assembled, he ordered that all the doors of his palace be closed. Then he came out and said, 'O Byzantines! If success is your desire and if you seek right guidance and want your empire to remain then give a pledge of allegiance to this Prophet (i.e. embrace Islam).' (On hearing the views of Heraclius) the people ran towards the gates of the palace like onagers but found the doors closed. Heraclius realized their hatred towards Islam and when he lost the hope of their embracing Islam, he ordered that they should be brought back in audience. (When they returned) he said, 'What already said was just to test the strength of your conviction and I have seen it.' The people prostrated before him and became pleased with him, and this was the end of Heraclius's story (in connection with his faith).


[8] সহি মুসলিম: বই ০১৯, হাদিস ৪৩৮০

[9] সহি তিরমিজী: চ্যাপ্টার ১১, হাদিস নম্বর ০০৬ (০৮৭):

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন