রাষ্ট্রপতি কুরআন-সুন্না বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। কোন মুসলমানের পক্ষে ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব নয়। ধর্মীয় রাষ্ট্রের দাবী ছাড়াও সম্ভব নয়। বলেছেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীরে শরীয়ত আল্লামা শাহ আতাউল্লাহ হাফেজ্জী। বাংলাদেশের বিশিষ্ট আলেম ও কুখ্যাত রাজাকার হাফেজ্জী হুজুরের এই ছোট ছেলে নিজেও বিশিষ্ট আলেম। কিন্তু যত আলেমই হোন নিজে থেকে মতামত দিলে সেটা ইসলাম বলে গোণ্য হবে না। ইসলাম মূলত দলিল ভিত্তিক ধর্ম। তাহলে দেখা যাক আসলেই ইসলাম গণতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতা ইত্যাদি বিশ্বাস করে কিনা। কুরআনে ইসলামী শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে বলা আছে, أفحكم الجاهلية يبغون ومن أحسن من الله حكما لقوم يوقنون
তারা কি জাহিলিয়্যাতের শাসন-ব্যবস্থা কামনা করে? দৃঢ় বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য আইন প্রণেতা হিসেবে আল্লাহর চাইতে উত্তম কে আছে? (সূরা মায়েদা: ৫০)। এই আয়াতের তাফসির করতে গিয়ে ইনবে কাথির লিখেছেন, ‘(এই আয়াতে) আল্লাহ তায়ালা এমন ব্যক্তির নিন্দা করেছেন যারা আল্লাহর বিধানকে ছেড়ে দেয়, অথচ তা (আল্লাহর বিধান) সকল কল্যাণকে সমন্বিত করে এবং সকল ক্ষতিকারক বিষয় থেকে নিষেধ করে।… যে ব্যক্তি এমন কাজ করে সে কাফের। তার বিরুদ্ধে কিতাল করা ওয়াজিব যতক্ষণ পর্যন্ত না সে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের (সাঃ) সুন্নাতের দিকে ফিরে আসে, এবং কোন অবস্থাতেই আল্লাহর বিধান ছাড়া অন্য কোন বিধান দ্বারা কম কিংবা বেশী কিছুমাত্রও ফায়সালা করে না’ (তাফসীর ইবনে কাসীর, সুরা মায়দা)
সুরা মায়দার এই আয়াত দিয়েই হযরত আলীকে খুন করা হয়েছিলো। আলী বিরোধীরা তাকে কুরআন-সুন্নার বাইরে শাসন চালানোর অভিযোগ তুলে হত্যা করেছিলো। তবে এই আয়াতের শান্তিবাদী ইসলামপন্থিদের ব্যাখ্যা হচ্ছে উক্ত আয়াত কোন মুসলমান শাসকের বিরুদ্ধে বলা হয়নি কারণ মুসলমান কাফের হয় না। এটা ইহুদীনাসারাদের বিষয়ে বলা হয়েছে। কোন মুসলিম দেশের শাসক ইসলাম অনুযায়ী শাসন পরিচালনা না করলে তাকে হত্যা করার ফতোয়া দেয়া যাবে না- এটা অমুসলিম শাসকদের বিষয়ে বলা হয়েছে। অর্থ্যাৎ ইসলামের শান্তিবাদী গ্রুপ বলছে কোন কাফের মানে অমুসলিম শাসকের বিষয়ে তাকে হত্যার বিধানটা ঠিক আছে!
যাই হোক, মহামান্য রাষ্ট্রপতি এমন একটি বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন যা বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় কোন বিকল্প নেই। অথচ পৃথিবীর দেড়শো কোটি মানুষকে কি করে ধর্মভিত্তিক শাসন থেকে বিরত রাখা যাবে? বাংলাদেশের কথাই যদি ধরি, সৌদি অর্থায়নে প্রতিটি জেলায় মসজিদ এবং ইসলামী লাইব্রেরি তৈরি হচ্ছে। এসব জায়গাতে তো ইসলামের এই শিক্ষাগুলোই দেয়া হবে। শুক্রবার মসজিদে বয়ানে ইমাম সাহেব ইসলামী রাষ্ট্রের প্রচার চালান মায়দার ৫০ নম্বর আয়াত দিয়ে। মায়দার ৫০ নম্বর আয়াত গণতন্ত্র সেক্যুলারিজমসহ প্রজাতান্ত্রিক সমস্ত শাসনের বিরোধী মধ্যযুগীয় এক ধর্মীয় শাসনের কথা বলে। লক্ষ লক্ষ মাদ্রাসাতে এই শিক্ষা লাভ করেই প্রতিবছর জনসংখ্যার একটা উল্লেখযোগ্য শতাংশ ইসলামী শাসনের সৈনিক হয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রপতির নিজ দলই সেই শিক্ষাব্যবস্থাকে সমমান দিয়ে পৃষ্টপোষকতা করে চলেছে। সম্প্রতি দৈনিক প্রথম আলোর জরিপ বলছে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ গণতন্ত্রের পাশাপাশি শরীয়া শাসনকে স্বাগত জানাচ্ছে। এই যে তাদের শরীয়া প্রীতি এসব না জেনেবুঝেই এসেছে মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে।
পৃথিবী এক ঘোর সংকটে পড়েছে। মুসলিম বিশ্বাস এক বড় ধরণের বিবাদ বাঁধিয়েছে পৃথিবী বহুজাতি সম্প্রদায় অধ্যুষিত দেশগুলোতে। অস্ট্রিয়াতে আজ থেকে বোরখা হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মুসলিমদের বিভেদ এবং একই দেশে বাস করেও প্রতিবেশীদের শত্রু মনে করার যে ধর্মীয় শিক্ষা, পশ্চিমারা প্রথমিকভাবে পোশাকের স্বকীয়তা ঘুচিয়ে একটা রফা করতে চাইছে। যেমন অস্ট্রিয়া বোরখা নিহাজ নিষিদ্ধ করতে গিয়ে বলেছে এই পোশাক আমাদের মূল্যবোধের সঙ্গে যায় না। গণতন্ত্র ব্যক্তি স্বাধীনতার স্বর্গ ইউরোপ নানা তিক্ত অভিজ্ঞতায় ঠকে এতখানি কঠোর হতে বাধ্য হচ্ছে। এখন মডারেট মুসলিম ও তাদের বন্ধু বামরা ছাড়া পশ্চিমাদের নিরাপত্ত ও অন্যান্য ইস্যুতে নেয়া কড়াকড়িকে কেউ প্রতিবাদ জানাবে না। কারণ ভুক্তভোগী সকলেই। জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাংগেলা মারকেলের শত্রুরা তাকে ‘মুসলিম তোষণকারী’ বলে অভিহত করে থাকে, সেই তিনিও
বলেছেন, আইনগতভাবে সম্ভব হলে জার্মানিতেও পুরো-মুখ-ঢাকা বোরকা বা নিকাব নিষিদ্ধ করা উচিত।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি, সারাবিশ্ব তো দূরের কথা, আপনি আপনার দলের সাচ্চা ঈমানদারদের কোপাণলেই পড়তে যাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। তবে আপনার ঘা-টা যে জায়গা মত লেগেছে তার জন্য আপনাকে সংগ্রামী অভিনন্দন…।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন