... গ্রামবাসীরা পিটিয়ে জখম করে ওই ব্যক্তিকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল। কিন্তু আজ শনিবার সকালেই শ দুয়েক সশস্ত্র লোক থানায় চড়াও হয়। তারা লক আপ খুলিয়ে জোর করে ওই ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যায়। তারপর পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। লোকটি যখন পুড়ছে তখন জনতা 'আল্লা হো আকবর' ধ্বনি দিচ্ছিল। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় লোকটিকে।
কী আর বলার আছে! ছহীহ ইছলামী আচরণ।
ঘটনা ফাকিস্তানে। লোকটির অপ্রমাণিত অপরাধ, সে কোরান অবমাননা করেছিল। কাজটি যদি সে করেও থাকে, তাকে এমন পাশবিক পাকিস্তানী উপায়ে হত্যা করে কোরানের সম্মান ফিরে পাওয়া গেল?
কোরাণের অবমাননা করার অভিযোগে এক যুবককে জীবন্ত পুড়িয়ে মারল উত্তেজিত জনতা। সেই মৃত্যু যন্ত্রণা রীতিমতো উপভোগ করল উপস্থিত মানুষজন। শনিবারের এই নারকীয় ঘটনা প্রমাণ করে দিল, পাকিস্তান আছে পাকিস্তানেই। সিন্ধুপ্রদেশের দাদু জেলার সিতা গ্রামের এক মসজিদের ইমাম মৌলবি মেমন জানিয়েছেন, যে ব্যক্তিকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে সে বহুদূর থেকে এখানে কোনও কাজে এসেছিল বৃহস্পতিবার রাতে। মসজিদেই সে আশ্রয় নিয়েছিল। শুক্রবার সকালে তার চলে যাওয়ার কথা ছিল। রাতে যুবকটি একাই ছিল। সকালে সে ঘর ছাড়ার আগে দেখা যায় পবিত্র কোরাণের ছেঁড়া পাতা ও পুড়ে যাওয়া অবশেষ পড়ে রয়েছে তারই ঘরে। জিজ্ঞেস করায় সে কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি।
মৌলবির অভিযোগ, সে যখন মসজিদে একাই ছিল কোরাণ পোড়ানোর মতো ভয়ঙ্কর ঘটনাটা তো সে ছাড়া আর কেউ করতে পারে না। তাই তাকে আমরা পুলিশের হাতে তুলে দিই।
দাদু জেলার পুলিশ সুপার উসমান গণি জানিয়েছেন, গ্রামবাসীরা পিটিয়ে জখম করে ওই ব্যক্তিকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল। কিন্তু আজ শনিবার সকালেই শ দুয়েক সশস্ত্র লোক থানায় চড়াও হয়। তারা লক আপ খুলিয়ে জোর করে ওই ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যায়। তারপর পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। লোকটি যখন পুড়ছে তখন জনতা 'আল্লা হো আকবর' ধ্বনি দিচ্ছিল। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় লোকটিকে। পরে বিশাল পুলিশবাহিনী জেলা সদর থেকে থানায় আসে। পুলিশ ঘটনায় জড়িত ৩০ জন গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করেছে। কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে সাত জন পুলিশকেও আটক করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ১৯৯০ সাল থেকে কোরাণের অবমাননা করার অভিযোগে পাকিস্তানে বিভিন্ন সময় ৫৩ জন খুন হয়েছেন। এই তথ্য দিয়েছে সেন্টার পর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিওরিটি স্টাডিজ। ধর্মীয় বা ইসলামের অবমাননা প্রমাণিত হলে পাকিস্তানে শাস্তি হল, মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু তা আদালতে প্রমাণিত হলে তবে। এক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও সুযোগই পেলেন না। মধ্যযুগীয় এই বর্বরতার নিন্দা করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য, মানবতা বিরোধী, ধর্মীয় গোঁড়ামির প্রতীক অভিশপ্ত আইন সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছিলেন দুই পাক আমলা। কিন্তু কট্টর মৌলবাদীদের হাতে প্রাণ দিতে হয় তাঁদের। একজনকে তো তার দেহরক্ষীই গুলি করে মারে। ওঁদের অপরাধ, অভিশপ্ত ধর্মীয় আইন সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছিলেন। সেই আততায়ীকে যখন আদালতে হাজির করা হয় তখন গোলাপের পাপড়ি ছুঁড়ে তাকে স্বাগত জানিয়েছিল জনতা। আততায়ী সগর্বে জানিয়েছিল, সে ইসলামের জন্য বীরের মতো কাজ করেছে। বিচারক আততায়ীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। কিন্তু জনমতের চাপে পাক সরকার মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে। ওই বিচারককে দেশ চাড়তে বাধ্য করা হয়। ওই বিচারক এখন সৌদি আরবে আশ্রয় নিয়েছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন