আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

বিশ্বাসের দরজায় করাঘাত!: পর্ব ১৫ – (প্রমাণ করুন মদপান হারাম!)

লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ


বড় চাচার বন্ধু ডাকলেন একদিন, জামাতের বড় মাপের আলেম তিনি; ডেকেই প্রশ্ন করলেন, "বাবা, তুমি নাকি তোমার চাচারে বলেছো, কোরান অনুসারে মদপান হারাম না! নিয়ম মেনে মাতাল না হয়ে ২/৩ পেগ খাওয়া যায়! এসব কী কথা তোমার?!"

আমি বললাম, "চাচা, ইসলামে তো কোরানই শেষ কথা, আল্লার নবী তো নিজেই হাদীস লিখে রাখতে মানা করেছিলেন; এবং আপনারাই বলেন, কোরানের কোনো কথার বিপরীতে যদি হাদীসের বক্তব্য চলে আসে, তবে সে হাদীস মানা যাবে না। যদি তা-ই হয়, তবে মদ হারাম বিষয়ে হাদীসের বক্তব্য কোরানের পুরোপুরি বিপরীত, এবং সত্যিই কোরান অনুসারে মদপান হারাম নয়!"

চাচা বললেন, "আমাকে বিস্তারিত বুঝাইয়া দাও!"


আমি বললাম, "চাচা, এসব কথা তো কাগজ কলম আর কোরান হাতে না নিয়ে বোঝানো মুশকিল। আপনি তো আজ আমাদের বাসাতেই আছেন, আমি বিকালে আপনার সাথে বসেই আলোচলা করে মদ হালাল করবো, শুধু এটা বলুন: মদ কি বেহেস্তে হালাল?


চাচা বললেন: হ্যাঁ।

তারপর বিকাল বেলার গল্প:
হালাল ও হারাম শব্দ দুটিই পুরোপরি আরবি এবং কোরানে একাধিক আয়াতে এই শব্দ দু'টি ব্যবহৃত হয়েছে। কোরনের আল্লাহ যখন কোনোকিছুকে (কাজ, খাদ্য, বস্তু) হারাম/নিষিদ্ধ করেন, তখন তা সকল মুসলমানের জন্য অবশ্য পালনীয়। আল্লাহ ছাড়া আর কারো পক্ষেই কোনোকিছুকে (কাজ, খাদ্য, বস্তু) হারাম বলে মতামত দেবার ক্ষমতা ইসলামে নেই, আল্লাহ নিজেই সেটা বলেছেন:

তোমাদের মুখ থেকে সাধারনতঃ যেসব মিথ্যা বের হয়ে আসে তেমনি করে তোমরা আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে বল না যে, এটা হালাল এবং ওটাহারাম নিশ্চয় যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা আরোপ করে, তাদের মঙ্গল হবে না। (সূরা আন নাহল ১৬: ১১৬ আয়াত)

কোরানে হারাম জিনিষকে 'হারাম'-ই বলা হয়েছে। এবং 'হারাম' (حرم) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যে সকল জিনিসকে হারাম বলা হয়েছে, তার জন্য আল্লাহ কোনো কারণ বা ব্যাখ্যা দেবার প্রয়োজন বোধ করেননি। কোরানে কিছু কিছু ক্ষেত্রে হারাম শব্দ উল্লেখ না করে কোনোকিছুকে নিষিদ্ধ করার জন্য দোজখের ভয়ও দেখানো হয়েছে।

কোরানে সূরা আল মায়িদাহ (৫:৩) আয়াতে মৃত জীব, রক্ত ও শূকরের মাংসকে হারাম করা হয়েছে হারাম শব্দ উল্লেখ করে:

حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالْدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيرِ
৫:৩ তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শুকরের মাংস.....।

কোরানে হারাম শব্দ উল্লেখ না করে বিশ্বাসী মুসলমানকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করাকে শাস্তির ভয় দেখিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সূরা আন নিসা (৪:৯৩) আয়াতে:

৪:৯৩ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত বিশ্বাসীকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্যে ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।

এখন আমরা দেখবো হারাম/নিষিদ্ধ করার কোরানের দুই নিয়মে মদপান কি হারাম/নিষিদ্ধ? কোরানে ৫টি আয়াতে মদ/নেশা নিয়ে কথা বলা হয়েছে।

(১) সূরা আন নিসা (নারী) ৪:৪৩
হে ঈমাণদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাক, তখন নামাজের ধারে-কাছেও যেও না, যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছ......।

এই আয়াতে হারাম বা নিষিদ্ধ শব্দটি নেই বা দোজখের ভয়ও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবেও দেখানো হয়নি। শুধু নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাজের কাছে যেতে নিষেধ করা হচ্ছে, কারণ নামাজে কী বলা হচ্ছে, সেটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ, না বুঝলে সে নামাজ পড়ার কোনো মানে নেই। যেহেতু বেশি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মানুষের বোধবুদ্ধি এমন লোপ পায় এবং সে কী বলছে, তা বোঝে না, সে কারণেই নামাজের কাছে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। নেশাগ্রস্ত হতে কিন্তু নিষেধ করা হয়নি। এখন কেউ যদি অল্প নেশা/মদপান করে এবং তার বোধবুদ্ধি লোপ না পায়, তাহলে তাকে কোরানের এই আয়াত অনুযায়ী দোষ দেয়া যায় না। এই আয়াতে প্রমাণ হলো না - মদপান হারাম!

(২) সূরা আল মায়িদাহ (খাদ্য পরিবেশিত টেবিল) :৯০-৯১
"হে বিশ্বাসীগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণয়ক তীর ঘৃণ্যবস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা (কে) বর্জন কর তাহলে তোমরা সফলকাম হতে পারবে। শয়তান তো মদ, জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণে ও সালাতে বাধা দিতে চায়। তবে কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না।"

এই আয়াতে ও হারাম বা নিষিদ্ধ শব্দটি নেই বা দোজখের ভয়ও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবেও দেখানো হয়নি। সুতরাং মদকে হারাম বলা যায় না। এছাড়া আয়াতটিতে فَاجْتَنِبُوهُ /ফাআজতানেবুহু অর্থাৎ তাকে (শয়তানকে) বর্জন করতে বলা হয়েছে। শব্দের শেষে যে 'হু' আছে, তা একবচন। যদি মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর সবগুলোকেই বর্জন করতে বলা হতো, তাহলে 'হুম' বহুবচন থাকতো। ভালো করে আয়াতটি পড়লে বোঝা যায়, এগুলোকে শয়তানের হাতিয়ার বলা হয়েছে, যা দিয়ে মানুষকে সে বিপথে নেয়। এ কারণেই শয়তানকে বর্জন করতে বলা হয়েছে, মদকে নয়।

(৩) সূরা আল মায়িদাহ (খাদ্য পরিবেশিত টেবিল) :৯৩
৫:৯৩ যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তারা যা ভক্ষণ করেছে, সে জন্য তাদের কোন পাপ (جُنَاحٌ) নেই....
Muhammad Asad 5:93 Those who have attained to faith and do righteous deeds incur no sin by partaking of whatever they may, so long as they are conscious of God and [truly] believe and do righteous deeds, and continue to be conscious of God and to believe, and grow ever more conscious of God, and persevere in doing good: for God loves the doers of good.

এই আয়াতটির ইংরেজি অনুবাদও দিলাম, কারণ বাংলা অনুবাদে এমন কিছু শব্দ ঢোকানো হয়েছে, যা আরবি কোরানে নেই। এই আয়াতটিতে দেখুন, হারাম ব্যতীত সকল খাবার খাওয়া যায়। আর খাবার নয়, সৎ কাজ ও ঈমানের ওপরেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সৎ ভাল কাজের কথা বারবার বলা হয়েছে। চলুন, এবার পুরো অনুবাদটি দেখি:

যারা ঈমান আনে আর সৎকর্ম করে তারা পূর্বে যা খেয়েছে তার জন্য তাদের উপর কোন পাপ নেই যদি তারা বিরত থাকে, আর ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, অতঃপর সাবধানতা অবলম্বন করে আর ঈমানের উপর থাকে, অতঃপর আল্লাহকে ভয় করে এবং সৎকাজ করে। আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন। (৫:৯৩- অনুবাদটি তাইসিরুল কুরআন থেকে) এই আয়াতে মদপান হারাম প্রমাণ হলো কি?
  
(৪) সূরা আন নাহল (মৌমাছি) ১৬:৬৭ আয়াত
এবং খেজুর বৃক্ষ ও আঙ্গুর ফল থেকে তোমরা নেশা/মাদক (سَكَرًا) ও উত্তম খাদ্য তৈরী করে থাক, এতে অবশ্যই বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।

এখানেও নেশা বা মদকে হারাম বলা হয়নি। বরং নেশা ও উত্তম খাদ্য একই কাতারে ফেলা হয়েছে।

(৫) সূরা আল বাকারা (বকনা-বাছুর) :২১৯
তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ (إِثْمٌ كَبِيرٌ) আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়।

মদের ভাল মন্দ দুটো দিকই আছে, যা আগের আয়াতগুলো থেকে স্পষ্ট। এ আয়াতেও মদের উপকরিতা ও অপকারিতা নিয়ে বলা হয়েছে। উপকারিতার বিপরীত অপকারিতা বা অপব্যবহার হয়, পাপ হয় না। কিন্তু আমাদের আলেমরা إِثْمٌ كَبِيرٌ এর মানে মহাপাপ বলছেন, যা সঠিক নয়। আরবিতে পাপ হলো যুনাহুন/جُنَاحٌ। তাহলে আপনারাই চিন্তা করুন إِثْمٌ كَبِيرٌ এর সঠিক মানে মহাপাপ নাকি মহা অপকারিতা বা অপব্যাবহার?

আল্লাহ কোরানে কোনোকিছুকে হারাম/নিষিদ্ধ বলতে শাস্তির ভয় দেখিয়ে নিষেধ করেছেন অথবা সরাসরি হারাম শব্দটি বলেছেন। কোরানের কোথাও মদ/নেশাকে হারাম বলা হয়নি। কোরানে মদের ভাল ও মন্দের উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র।

ইতিহাস বলে, তুর্কি খলিফারাই তাদের সৈন্যদের মদ খাওয়া থেকে নিবৃত্ত করার জন্য হাদীসের মাধ্যমে মদকে হারাম করে। এর আগে উমাইয়া ও আব্বাসী খলিফারা যে মদপান করতেন, তার ভুরিভুরি প্রমাণ এখনও বিদ্যমান।

তো মুমিন মুসলমান বন্ধুরা, (তোমরা আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে বল না যে, এটা হালাল এবং ওটা হারাম। নিশ্চয় যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা আরোপ করে, তাদের মঙ্গল হবে না। ১৬: ১১৬) তাই বেহেস্তী পানীয়কে হারাম বলবেন না; ভেবে দেখুন, কীভাবে আল্লাহ এমন কিছুকে (কাজ, খাদ্য, বস্তু) হারাম করতে পারেন, যা বেহেস্তে হালাল হবে? তাই নিশ্চিন্তে মদপান করুন, তবে মাতাল না হয়ে!

তো হয়ে যাক আজ দু'পেগ!

(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন