কুরানের প্রবক্তা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর আল্লাহর উদ্ধৃতি দিয়ে ঘোষণা করেছেন যে, তাঁর কল্পিত আল্লাহর অনুমতি ছাড়া শয়তান কোনো মন্দ কাজ করতে পারে না। তিনি দাবি করেছেন যে, তাঁর আল্লাহ অবিশ্বাসীদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করেন না এবং তাদেরকে বিপথগামী করার জন্য আল্লাহ শয়তান নিযুক্ত করেন। তাঁর দাবি, ‘আল্লাহ’ অবিশ্বাসীদের অন্তরের পাপ বৃদ্ধি করে দেন এবং তাদের মন, কান ও চোখে পর্দা ঢেলে দেন, যাতে তাঁরা পথ-প্রাপ্ত বিশ্বাসী হতে না পারেন। প্রবক্তা আরও ঘোষণা দিয়েছেন যে, তাঁর আল্লাহ স্বয়ং এবং তাঁর ফেরেশতা অবিশ্বাসীদের অভিশাপ দেন। এ বিষয়ে বিষদ আলোচনা আগের দু'টি পর্বে করা হয়েছে। এমত পরিস্থিতিতে অবিশ্বাসীরা যে কোনোভাবেই 'পথ-প্রাপ্ত' হতে পারেন, তা কি বলার অপেক্ষা রাখে? তাহলে? অবিশ্বাসীরা কীভাবে পরহেজগার হবেন?
যেখানে 'আল্লাহ' স্বয়ং এবং তাঁর সমস্ত বাহিনী (শয়তান এবং ফেরেস্তাগন) অবিশ্বাসীদের বিশ্বাসী হবার সকল পথ বন্ধ করে দিয়েছেন, সেখানে 'অবিশ্বাসীরা' ঠিক কী অপরাধে অপরাধী তা সুস্থ বিচার-বুদ্ধি ও যুক্তির অতীত (নো সেন্স)! এহেন পরিস্থিতিতে অবিশ্বাসীরা কোনো অপরাধেই অপরাধী হতে পারেন না। এই সহজ সত্যটি বিশ্বাসীরা কখনোই বুঝতে পারেন না। যতই তাঁরা "স্বাধীন-ইচ্ছা (Free Will)"-এর দোহায় দিয়ে ত্যানা-প্যাঁচানো যুক্তির অবতারণা করেন, ততই তাঁরা নিজেকে হাস্যকর প্রতিপাদ্য করেন। কারণ আল্লাহ এবং তাঁর বাহিনীর বাধার মুখেও যদি কোনো মানুষ তাঁর স্বাধীন ইচ্ছা প্রয়োগে বিশ্বাসী হতে পারেন, তবে কুরানে মুহাম্মদ বর্ণিত আল্লাহর যাবতীয় শক্তিমত্তার জয়গান ও জারিজুরি স্রেফ তামাশা! আর যদি আল্লাহর অসীম ক্ষমতার অপব্যবহারে (বান্দাকে বিপথে পরিচালনা) অবিশ্বাসীরা অবিশ্বাসীই থেকে যান, তবে তার সমস্ত দায়ভার স্বয়ং আল্লাহর! মানুষের নয়!
যদি সৃষ্টিকর্তা মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছার অধিকারী করেন। আর সেই স্বাধীন ইচ্ছাটি প্রয়োগ করে কেউ যদি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব ও তাঁর তথাকথিত আদেশ নিষেধের কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে না পেয়ে অবিশ্বাসী হন, আর সেই অবাধ্যতার কারণে সৃষ্টিকর্তা যদি সেই মানুষটিকে আগুনে পোড়ানোর ঘোষণা দেন, তবে সে "ইচ্ছা" কখনোই স্বাধীন হতে পারে না। অসহায় কোনো মানুষের মাথায় বন্দুকের নল দাগিয়ে কেউ যদি তাকে সর্বশক্তিমান দয়ালু বলে মানার হুংকার দেন, আর তা না করলে উক্ত বন্দুকধারী যদি সেই অসহায় মানুষটিকে গুলি করে খুন করার হুমকি দিয়ে বলেন, "সিদ্ধান্তটা তোর স্বাধীন ইচ্ছার উপরই ছেড়ে দিলাম। আমাকে মানবি কি মানবি না, তা তোর ইচ্ছা!", তাহলে তা হবে যেমন অতীব হাস্যকর, তার চেয়েও বেশি হাস্যকর অবিশ্বাসীদেরকে অভিশাপ বর্ষণ ও বিপথে পরিচালনা করে তাদেরকেই আবার বশ্যতা স্বীকারের আদেশ, অন্যথায় অনন্তকাল আগুনে পোড়ানোর হুমকি! বেশি হাস্যকর এ কারণে যে, বন্দুকধারীটি সন্ত্রাসী হতে পারেন কিন্তু 'ভণ্ড' নন। আল্লাহর মত সে সেই অসহায় ব্যক্তিটিকে 'বিপথে’ পরিচালনা করেননি।
অন্য দিকে মুহাম্মদের ঘোষণা, পরহেজগারদের পরহেজগারির পিছনে আল্লাহরই অনুগ্রহ জড়িত। আল্লাহই তাঁদেরকে বিশেষ অনুগ্রহের মাধ্যমে করেছেন হেদায়েত প্রাপ্ত। অর্থাৎ বিশ্বাসী হবার পেছনে পরহেজগারির আদৌ কোনো কৃতিত্ব নাই। সম্পূর্ণ কৃতিত্বই আল্লাহর! এতদসত্ত্বেও আল্লাহ পরহেজগারদের পুরস্কৃত করবেন। বিনা কৃতিত্বেই অনন্ত পুরষ্কার! কারণ? আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিশ্বাসী বানান, যাকে ইচ্ছা অবিশ্বাসী বানান, যাকে ইচ্ছা সরল পথে চালান, যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন। যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন, যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন। সুতরাং, মুহাম্মদের দাবির পর্যালোচনায় আমরা যে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি, তা হলো: তাঁর কল্পিত আল্লাহ, অবিশ্বাসীদের বিনা দোষেই অনন্ত শাস্তি এবং বিশ্বাসীদের বিনা কৃতিত্বেই অনন্ত পুরস্কার ও শান্তি দেন। Any sense? No sense!
প্রবক্তা মুহাম্মদ নিজেকে অভ্রান্ত দাবি করে তার আল্লাহর উদ্ধৃতি দিয়ে অবিশ্বাসীদের উদ্দেশ্যে সুরা প্রতিযোগিতার আহ্বান (পর্ব-১৯) ছাড়াও আর যে সকল চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছিলেন, তা মুহাম্মদের ব্যক্তি-মানস জীবনী গ্রন্থে বর্ণিত আছে। মুহাম্মদেরই ভাষায় তারই অল্প কিছু উদাহরণ:
২:৯৪ - বলে দিন, যদি আখেরাতের বাসস্থান আল্লাহর কাছে একমাত্র তোমাদের জন্যই বরাদ্দ হয়ে থাকে - অন্য লোকদের বাদ দিয়ে, তবে মৃত্যু কামনা কর, যদি সত্যবাদী হয়ে থাক।
>>> অদ্ভুত প্রস্তাবনা! মৃত মানুষ কথা বলতে পারে না। যুক্তির খাতিরে যদি ধরেও নিই যে, মরণোত্তর জীবন বলে আদৌ কিছু আছে, তথাপি কোনো মৃত ব্যক্তি মরণের ওপার থেকে জীবিতদের সাথে যোগাযোগ করে "রাজসাক্ষী" হতে পারে না। তাই মৃত্যুকামনা বা মৃত্যুবরণের মাধ্যমে সত্যতার যাচাইয়ের কোনো প্রশ্নই আসে না! এই একই "প্রস্তাবনা" যদি প্রবক্তা মুহাম্মদ এবং তার অনুসারীদের দেওয়া হয়, তাহলে কি তাঁরা মৃত্যুকামনা/মৃত্যুবরণ করে অবিশ্বাসীদের প্রমাণ দেবেন যে, তাঁরা সত্যবাদী? এমনতর দাবি একেবারেই ননসেন্স (অর্থহীন আগড়ম বাগড়ম)!
২) "তারা" তোমাদের কষ্ট দুর করতে অক্ষম!
১৭:৫৬ - বলুনঃ আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে তোমরা উপাস্য মনে কর, তাদেরকে আহবান কর। অথচ ওরা তো তোমাদের কষ্ট দুর করার ক্ষমতা রাখে না এবং তা পরিবর্তনও করতে পারে না।
>>> মুহাম্মদের "আল্লাহ" যে ইসলাম বিশ্বাসীর কষ্ট দুর করার ক্ষমতা রাখে, তার কি কোনো প্রমাণ আছে? ইসলাম বিশ্বাসীরাই জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিক্ষা-অর্থনীতিসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পৃথিবীর সর্বনিম্ন!
৩) "তারা" কখনও একটি মাছি সৃষ্টি করতে পারে না!
২২:৭৩ - হে লোক সকল! একটি উপমা বর্ণনা করা হলো, অতএব তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শোন; তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের পূজা কর, তারা কখনও একটি মাছি সৃষ্টি করতে পারবে না, যদিও তারা সকলে একত্রিত হয়। আর মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কোন কিছু ছিনিয়ে নেয়, তবে তারা তার কাছ থেকে তা উদ্ধার করতে পারবে না, প্রার্থনাকারী ও যার কাছে প্রার্থনা করা হয়, উভয়েই শক্তিহীন।
>>> মুহাম্মদের "আল্লাহ" যদি অবিশ্বাসীদের সামনে এসে একটি মাছি সৃষ্টি করে তার অস্তিত্বের প্রমাণ হাজির করে দেখাতেন, আর সেই মাছিটি যদি কিছু ছিনিয়ে নেয়, তবে "আল্লাহ" যদি তা নিজেই উদ্ধার করে অবিশ্বাসীদের দেখাতেন, তাহলেই শুধু এ বাণীর "সেন্স" থাকতো! নতুবা এমনতর দাবি "ননসেন্স"!
৪) "তোমাদের" দেব-দেবীকে "আমার" সামনে হাজির কর!
৩৪:২৭ – বলুন, তোমরা যাদেরকে আল্লাহর সাথে অংশীদাররূপে সংযুক্ত করেছ, তাদেরকে এনে আমাকে দেখাও। বরং তিনিই আল্লাহ, পরাক্রমশীল, প্রজ্ঞাময়।
৬৪:৪১ - না তাদের কোন শরীক উপাস্য আছে? থাকলে তাদের শরীক উপাস্যদেরকে উপস্থিত করুক যদি তারা সত্যবাদী হয়।
>>> মুহাম্মদ কখনোই তার আল্লাহকে অবিশ্বাসীদের সামনে হাজির করে তার দাবির যথার্থতা প্রমাণ করেননি! তাই অবিশ্বাসীদের প্রতি তার এ চ্যালেঞ্জ একেবারেই ননসেন্স!
৫) “দেখাও” তোমাদের দেব-দেবী পৃথিবীতে কি সৃষ্টি করেছে?
৪৬:৪ - বলুন, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের পূজা কর, তাদের বিষয়ে ভেবে দেখেছ কি? দেখাও আমাকে তারা পৃথিবীতে কি সৃষ্টি করেছে? অথবা নভোমন্ডল সৃজনে তাদের কি কোন অংশ আছে? এর পূর্ববর্তী কোন কিতাব অথবা পরস্পরাগত কোন জ্ঞান আমার কাছে উপস্থিত কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।
>>> একেবারেই ননসেন্স!
৬) "তারা" তাদেরকে সাহায্য করল না কেন?
৪৬:২৮ - অতঃপর আল্লাহর পরিবর্তে তারা যাদেরকে সান্নিধ্য লাভের জন্যে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছিল, তারা তাদেরকে সাহায্য করল না কেন? বরং তারা তাদের কাছ থেকে উধাও হয়ে গেল। এটা ছিল তাদের মিথ্যা ও মনগড়া বিষয়।
>>> সেই সনাতন প্যাচাল! এক বিশ্বাসী আর এক বিশ্বাসীকে বলে, "আমি সত্য, তুমি মিথ্যা।" একে অপরকে চ্যালেঞ্জ ছোঁড়ে, 'দেখাও প্রমাণ'। পাঠক, বুঝতেই পারছেন আল্লাহর "লেবাসে" মুহাম্মদও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। নিজ নিজ বিশ্বাসের স্রষ্টা/উপাস্যকে অভ্রান্ত প্রমাণ করার প্রয়োজনে যুগে যুগে মানুষ ‘নো সেন্স (অর্থহীন)’ কুযুক্তির অবতারণা করেছেন। কিন্তু মুহাম্মদের যুক্তিগুলো ‘নো সেন্স’ পর্যায়ের ছিল না। ছিল "ননসেন্স" পর্যায়ের। কারণ যে কর্ম তিনি নিজে করে দেখাতে পারেননি, তাইই তিনি দাবি করেছেন তার প্রতিপক্ষের কাছে!
অবিশ্বাসীরাও মুহাম্মদের কাছে তার নবুয়তের সত্যতার প্রমান দাবি করেছিলেন। হাজির করতে বলেছিলেন মুহাম্মদেরই দাবিকৃত পূর্ববর্তী নবীদের অনুরূপ একটি প্রমাণ। প্রত্যুত্তরে মুহাম্মদ তাদের কী জবাব দিয়েছিলেন, তার বিশদ বিবরণ কুরানে লিপিবদ্ধ আছে। বিস্তারিত আলোচনা করবো 'মুহাম্মদের মোজেজা' তত্ত্বে।
এ ছাড়াও মুহাম্মদের (আল্লাহ) বর্ণিত আরও কিছু "নো সেন্স ও ননসেন্স" এর উদাহরণ:
৭) তোমাদের জন্যে পুত্র-সন্তান আর "আল্লাহর" জন্য কন্যা-সন্তান - কী সাংঘাতিক?
১৭:৪০ - তোমাদের পালনকর্তা কি তোমাদের জন্যে পুত্র সন্তান নির্ধারিত করেছেন এবং নিজের জন্যে ফেরেশতাদেরকে কন্যারূপে গ্রহণ করেছেন? নিশ্চয় তোমরা গুরুতর গর্হিত কথাবার্তা বলছ।
১৯:৮৮-৯১ - তারা বলেঃ দয়াময় আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন। নিশ্চয় তোমরা তো এক অদ্ভুত কান্ড করেছ। হয় তো এর কারণেই এখনই নভোমন্ডল ফেটে পড়বে, পৃথিবী খন্ড-বিখন্ড হবে এবং পর্বতমালা চূর্ণ-বিচুর্ণ হবে। এ কারণে যে, তারা দয়াময় আল্লাহর জন্যে সন্তান আহবান করে।
>>> অবিশ্বাসীদের ধারনা আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন। প্রবক্তা মুহাম্মদের (আল্লাহর) কাছে এটা এতটাই গর্হিত অপরাধ যে, তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, "এর কারণেই এখনই নভোমণ্ডল ফেটে পড়বে, পৃথিবী খণ্ড-বিখন্ড হবে এবং পর্বতমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ হবে।" মুহাম্মদ (আল্লাহ) তার অংশীদার অথবা সন্তান ধারণ সংক্রান্ত মন্তব্যকে এত বেশি অপছন্দ করেন যে, তার অপরাধে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবকিছু চূর্ণ-বিচূর্ণ করতে চান! কেন? একমাত্র নপুংসক ছাড়া এমন মন্তব্যে আর কি কেউ এতটা উত্তেজিত হয়? মানুষের জন্যে পুত্রসন্তান এবং আল্লাহর জন্য কন্যাসন্তান এটা কি খুবই গুরুতর গর্হিত কথাবার্তা?
৯) "আশঙ্কা হেতু" শিশুহত্যায় কোনোই অপরাধ নাই!
১৮:৭৪ - অতঃপর তারা চলতে লাগল। অবশেষে যখন একটি বালকের সাক্ষাত পেলেন, তখন তিনি (খিজির আঃ) তাকে হত্যা করলেন। মূসা বললেন? আপনি কি একটি নিস্পাপ জীবন শেষ করে দিলেন প্রাণের বিনিময় ছাড়াই? নিশ্চয়ই আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন।
>>> কেন শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছিল? কারণ,
১৮:৮০ - বালকটির ব্যাপার তার পিতা-মাতা ছিল ঈমানদার। আমি আশঙ্কা করলাম যে, সে অবাধ্যতা ও কুফর দ্বারা তাদেরকে প্রভাবিত করবে।
>>> হ্যাঁ, তাই! খিজির (আ:) “আশঙ্কা” করেছিলেন যে শিশুটি বড় হয়ে তার ইমানদার পিতা-মাতাকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই তিনি শিশুটিকে হত্যা করেছিলেন সুস্থ মস্তিষ্কে! তিনি কি কোনো গর্হিত অপরাধ করেছিলেন? প্রবক্তা মুহাম্মদের (আল্লাহর) দৃষ্টিতে, "অবশ্যই নয়।" কী মহান শিক্ষা!
১০) অবিশ্বাসীদের জীবিকা হয় সংকীর্ণ!
২০:১২৪ - যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।
>>> বাস্তবতা ঠিক তার বিপরীত! অবিশ্বাসীরাই জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, শিক্ষা-দীক্ষায়, অর্থপ্রাচুর্য, ক্ষমতা ইত্যাদি সর্ববিষয়ে মুসলিমদের তুলনায় অনেক অনেক ওপরে। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা পঞ্চদশ পর্বে করা হয়েছে।
১১) সুদের (লাভ) প্রলোভন দেখিয়ে আল্লাহর "ধার ভিক্ষা"!
২:২৪৫ - এমন কে আছে যে, আল্লাহকে করজ দেবে, উত্তম করজ; অত:পর আল্লাহ্ তাকে দ্বিগুণ-বহুগুণ বৃদ্ধি করে দিবেন। আল্লাহ্ই সংকোচিত করেন এবং তিনিই প্রশস্ততা দান করেন এবং তাঁরই নিকট তোমরা সবাই ফিরে যাবে।
৫৭:১১ - কে সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহকে উত্তম ধার দিবে, এরপর তিনি তার জন্যে তা বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন এবং তার জন্যে রয়েছে সম্মানিত পুরস্কার।
৫৭:১৮ - নিশ্চয় দানশীল ব্যক্তি ও দানশীলা নারী, যারা আল্লাহকে উত্তমরূপে ধার দেয়, তাদেরকে দেয়া হবে বহুগুণ এবং তাদের জন্যে রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।
>>> এমন কোনো পরমোৎকৃষ্ট (Superlative) বিশেষণ নেই, যা মুহাম্মদ তাঁর কল্পিত আল্লাহর ওপর প্রয়োগ করেননি। সেই সত্ত্বাটিকেই যখন দেখি সামান্য মানুষের কাছে সুদের প্রলোভন দেখিয়ে ধার ভিক্ষা করছে, তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, অভাবটা আসলে কার! কোন অভাব হীন স্বত্বা মানুষকে সুদের প্রলোভন দেখিয়ে ধার ভিক্ষা কেন চাইবে? আর কেউ যদি সে ধার ভিক্ষা দিতে অস্বীকৃতি কিংবা গড়িমসি করে তবে কেনই বা সেই স্বত্বা মানুষকে শাস্তির হুমকি দেখাবে? ধার-চাঁদা-সাহায্য বিষয়গুলি ঐচ্ছিক। দাতা তা দিবেন কি দিবেন না তা তার ব্যক্তিগত বিষয়। চাহিদাকারী যদি 'ধার' দানে অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারীকে 'হুমকি' দিয়ে ধার দিতে বাধ্য করান তবে তা আর 'ধার' থাকে না। হয় জবরদস্তি! যদি কোন মানুষ অন্য কোন মানুষের কাছে 'চাঁদা বা সাহায্য' চাইবার পর তা না দেওয়া হলে তিনি দাতাটিকে হুমকি বা ভীতি প্রদর্শন করেন তবে তার নাম হয় চাঁদাবাজি বা মাস্তানি। আর সেই চাহিদাকারীকে বলা হয় মাস্তান বা সন্ত্রাসী।সত্য হলো স্রষ্টার (যদি থাকে) কোন ধার-কর্জের প্রয়োজন নেই। কিন্তু প্রবক্তা মুহাম্মদ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। সাহায্যের প্রয়োজন তারই। ক্ষমতার প্রয়োজন তারই। তোষামোদের প্রয়োজন তারই। তার অবাধ্যতা কারীকে হুমকি-শাসানী-ভীতি প্রদর্শন-প্রলোভন ইত্যাদি কৌশলে অনুগত করার প্রয়োজন তারই।
১২) মৃতরাও জীবিত!
২:১৫৪ - আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝ না।
>>> মৃত মানুষকে "মৃত" না বলে কীভাবে জীবিত বলা যাবে?
১৩) অঙ্গীকারাবদ্ধ! কবে? কিসের?
৭:১৭২-১৭৩ - আর যখন তোমার পালনকর্তা বনী আদমের পৃষ্টদেশ থেকে বের করলেন তাদের সন্তানদেরকে এবং নিজের উপর তাদেরকে প্রতিজ্ঞা করালেন, আমি কি তোমাদের পালনকর্তা নই ? তারা বলল, অবশ্যই, আমরা অঙ্গীকার করছি। আবার না কেয়ামতের দিন বলতে শুরু কর যে, এ বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না।অথবা বলতে শুরু কর যে, অংশীদারিত্বের প্রথা তো আমাদের বাপ-দাদারা উদ্ভাবন করেছিল আমাদের পূর্বেই। আর আমরা হলাম তাদের পশ্চাৎবর্তী সন্তান-সন্ততি। তাহলে কি সে কর্মের জন্য আমাদেরকে ধ্বংস করবেন, যা পথভ্রষ্টরা করেছে?
>>> "এ বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না" - কথাটি কি মিথ্যা? তথাকথিত অঙ্গীকারের বিষয় কি কেউ স্মরণ করতে পারেন? আর “অংশীদারিত্বের প্রথা তো আমাদের বাপ-দাদারা উদ্ভাবন করেছিল” বাণীটি কি অসত্য? পৃথিবীর প্রায় সব মানুষ তাদের পিতৃপুরুষের ধর্মকেই অকাট্য জ্ঞানে অনুসরণ করে। ধর্মান্তরিতের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য।
১৪) শাস্তি না পরীক্ষা?
২:১৫৫ - অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।
১১:১১৭ - আর তোমার পালনকর্তা এমন নন যে, জনবসতিগুলোকে অন্যায়ভাবে ধ্বংস করে দেবেন, সেখানকার লোকেরা সৎকর্মশীল হওয়া সত্ত্বেও।
>>> অত্যন্ত অসার বক্তব্য। ভাল কিছু ঘটলে বলা যাবে, 'আল্লাহ পুরস্কৃত করছে।' খারাপ কিছু ঘটলে বলা যাবে, 'আল্লাহ পরীক্ষা নিচ্ছে।’ এ দুইয়ের যে কোনো একটি নিয়েই জীবন। আর প্রাকৃতিক বিপর্যয় অনাদিকাল থেকে পৃথিবীতে আছে ও থাকবে। যদি বিপর্যয়ের কবলে পড়েন, তবে বলা যাবে, সেখানকার লোকেরা সৎ কর্মশীল ছিলেন না। যদি দুর্ঘটনার কবলে না পড়েন, তবে বলা যাবে, সেখানকার লেকেরা সৎ কর্মশীল ছিলেন, তাই দুর্ঘটনাটি হয়নি। যদি যুক্তির খাতিরে ধরেও নিই যে, কোনো জনপদের প্রত্যেকটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও মহিলা বিপথগামী (অসম্ভব প্রস্তাবনা) হবার কারণে তারা শাস্তির যোগ্য হয়েছে, সে কারণেই কি সম্পূর্ণ জনবসতি ধ্বংস করা ন্যায়সঙ্গত? শাস্তি হতে হবে শুধু যে অপরাধী, শুধু তারই। কী অপরাধ সে জনপদের শিশুদের? তারা তো কোনো অপরাধ করেনি। কী অপরাধে তাদেরকেও শাস্তি ভোগ করতে হবে? ২০০৪ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভয়াবহ সুনামিতে ২২৫,০০০ মানুষের নৃশংস মৃত্যু হয়েছিল। হাজার হাজার শিশু ও গর্ভবতী মহিলারাও ছিলেন সে নিষ্ঠুরতার শিকার। সমষ্টিগত শাস্তি (Collective Punishment) যে কোনো সভ্য সমাজে গুরুতর অপরাধ। একমাত্র বিবেকহীন সাইকোপ্যাথের পক্ষেই এমন নিষ্ঠুরতা সম্ভব। (একটি ভিডিও - ৪ মিনিট দীর্ঘ)
১৫) যদি সমুদ্রের পানি হয় কালি আর পৃথিবীতে সমস্ত বৃক্ষ হয় কলম!
১৮:১০৯ - বলুনঃ আমার পালনকর্তার কথা, লেখার জন্যে যদি সমুদ্রের পানি কালি হয়, তবে আমার পালনকর্তার কথা, শেষ হওয়ার আগেই সে সমুদ্র নিঃশেষিত হয়ে যাবে। সাহায্যার্থে অনুরূপ আরেকটি সমুদ্র এনে দিলেও।
৩১:১২৭ - পৃথিবীতে যত বৃক্ষ আছে, সবই যদি কলম হয় এবং সমুদ্রের সাথেও সাত সমুদ্র যুক্ত হয়ে কালি হয়, তবুও তাঁর বাক্যাবলী লিখে শেষ করা যাবে না। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
>>> "কুরানের অ্যানাটমি” পর্বে আমরা জেনেছি যে, সমগ্র কুরানের এক-তৃতীয়াংশ হুমকি-শাসানি-ত্রাস অথবা পুরাকালের নবীদের গল্প। এ ছাড়াও কুরানের বিশেষত্বের একটি হলো 'পুনরাবৃত্তি।" কুরানে মুসা (আঃ) ও ফেরাউনের গল্প ২১ বার, নূহের (আঃ) গল্প ১২ বার, ইবরাহিম (আঃ) এর গল্প ১২ বার, লূত (আঃ) এর গল্প ৯ বার, আ'দের গল্প ৮ বার, সালেহ ও সামুদের গল্প ৭ বার, আদম হাওয়া ও ইবলিস ও দাউদ ও সোলায়মান (আঃ) - এদের প্রত্যেকের গল্প ৫ বার বলা হয়েছে। এমন একটি বইয়ে যখন ওপরিউক্ত বাণী লেখা থাকে, তখন সহজেই বোঝা যায় যে, বক্তা হয় বিকারগ্রস্ত অথবা অতীব ধুরন্ধর ও চাপাবাজ! কারণ, "পালন কর্তার” বিষয়ে এত্ত কিছু লিখা অবশিষ্ট রেখে কোন সুস্থ-মস্তিষ্ক লেখকই পুরাকালের উপকথা, ঘৃণা, হুমকি, শাসানী, অভিশাপ, কসম, আর অসংখ্য পুনরাবৃত্তির আশ্রয় নিয়ে তার গ্রন্থের সিংহভাগ ভরাট করতেন না। সাত সমুদ্রের পানি কালি এবং সমস্ত বৃক্ষ কলম হলে সে গ্রন্থে লেখক/কথক মশাই মুসা-ফেরাউন-নূহ-ইবরাহিম-লূত-আ'দ-সালেহ-সামুদ-দাউদ-সোলায়মান-আদম-হাওয়া-ইবলিসের গল্প যে কতবার পুনরাবৃত্তি করতেন এবং কি বিশাল পরিমান হুমকি-শাসানী-হত্যা-হামলা-ঘৃণা বর্ষণ করতেন তা পাঠকের কল্পনার উপরই ছেড়ে দিলাম!
১৬) সাফা ও মারওয়ার বৈশিষ্ট্য!
২:১৫৮ - নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ্ তা’আলার নিদর্শনগুলোর অন্যতম। সুতরাং যারা কা’বা ঘরে হজ্ব বা ওমরাহ পালন করে, তাদের পক্ষে এ দুটিতে প্রদক্ষিণ করাতে কোন দোষ নেই। বরং কেউ যদি স্বেচ্ছায় কিছু নেকীর কাজ করে, তবে আল্লাহ্ তা’আলার অবশ্যই তা অবগত হবেন এবং তার সে আমলের সঠিক মুল্য দেবেন।
>>> কিসের মাপকাঠিতে সাফা ও মারওয়া 'নিদর্শন গুলোর অন্যতম'? সাফা ও মারওয়ার কী এমন বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে, যা অন্য পাহাড়ে নেই? লেখক/কথক সাহেব সে "নিদর্শনের" সামান্যতম আভাসও দেননি!
১৭) ইচ্ছা আছে সাধ্য নাই নাকি সাধ্য আছে ইচ্ছা নাই?
১১:১১৮ - আর তোমার পালনকর্তা যদি ইচ্ছা করতেন, তবে অবশ্যই সব মানুষকে একই জাতিসত্তায় পরিনত করতে পারতেন আর তারা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হতো না।
৩২:১৩ -আমি ইচ্ছা করলে প্রত্যেককে সঠিক দিক নির্দেশ দিতাম; কিন্তু আমার এ উক্তি অবধারিত সত্য যে, আমি জিন ও মানব সকলকে দিয়ে অবশ্যই জাহান্নাম পূর্ণ করব।
>>> মুহাম্মদের দাবি, তাঁর আল্লাহ প্রত্যেককে সঠিক দিক নির্দেশ দেননি, কারণ তিনি জিন ও মানবকে দিয়ে অবশ্যই জাহান্নাম পূর্ণ করবেন। অর্থাৎ কিছু মানুষ ও জিনকে তৈরিই করা হয়েছে জাহান্নাম পূর্ণ করানোর জন্যে! কী সাংঘাতিক দাবি! অনেকেই এ বাণীটির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলতে চান, “যেহেতু আল্লাহ সবজান্তা, তাই তিনি আগে থেকেই কে বেহেশতে যাবেন, আর কে জাহান্নামে যাবেন তা জানেন। আর জানেন বলেই তা আগে থেকেই লিখে রেখেছেন। তাঁরা দাবি করেন, আল্লাহ কখনোই কোনো মানুষেরই 'স্বাধীন ইচ্ছায়' বাধা দেন না...।” তাঁদের এ ব্যাখ্যা আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ প্রবক্তা মুহাম্মদ অসংখ্যবার ঘোষণা দিয়েছেন যে, তাঁর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সরল পথে চালান, যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন,যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন এবং তিনি অবিশ্বাসীদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করেন না।
মুহাম্মদ আরও দাবি করেছেন যে, তাঁর আল্লাহ অবিশ্বাসীদের করেন অভিশাপ এবং মন-কান-চোখে সিল মেরে করেন সরল পথ-প্রাপ্তিতে সক্রিয় বাধা প্রধান। শুধু তাইই নয়, পরবর্তীতে আমরা আরও জানবো যে, তাঁর আল্লাহ স্বর্গ থেকে তার ফেরেশতা বাহিনী পাঠিয়ে অবিশ্বাসীদের "খুন"ও করেন। তাই, ঐ সব সুবিধাবাদী ব্যাখ্যাকারীর এহেন ব্যাখ্যার আদৌ কোনো ভিত্তি নেই।
১৮) মৃতদের "জিজ্ঞেস করুন"!
৪৩:৪৫ - আপনার পূর্বে আমি যেসব রসূল প্রেরণ করেছি, তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন, দয়াময় আল্লাহ ব্যতীত আমি কি কোন উপাস্য স্থির করেছিলাম এবাদতের জন্যে?
>>> মুহাম্মদের পূর্বে যেসব রসূলের আগমন হয়েছিল, তাঁরা সবাই তার সময়ের অনেক অনেক বছর আগেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন। মৃত মানুষদের কি কোনো কিছু জিজ্ঞেস করা যায়? আর জিজ্ঞেস করলেই কি মৃতরা কোনো জবাব দিতে পারেন? অবশ্য ভয়ংকর (Psychotic) মানসিক রুগীরা মৃতদের কথা শোনেন, তাঁদের সাথে কথাও বলেন! আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় তাদের স্থান মানসিক হাসপাতালের তালাবন্ধ কক্ষে, চিকিৎসার প্রয়োজনে!
১৯) নুহের নৌকা!
১১:৪০ - অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে পৌঁছাল এবং ভূপৃষ্ঠ উচ্ছসিত হয়ে উঠল, আমি বললাম: সর্বপ্রকার জোড়ার দু'টি করে এবং যাদের উপরে পূর্বহ্নেই হুকুম হয়ে গেছে তাদের বাদ দিয়ে, আপনার পরিজনবর্গ ও সকল ঈমানদারগণ কে নৌকায় তুলে নিন। বলাবাহুল্য অতি অল্পসংখ্যক লোকই তাঁর সাথে ঈমান এনেছিল।
>>> সঙ্গত কারণেই (বিস্তারিত নিচে) তৌরাত ও বাইবেলের অন্যান্য গল্পের মত নুহের নৌকার এ গল্পটিরও পূর্ণ বিবরণ কুরানে অনুপস্থিত। পূর্ণ বিবরণ আছে বাইবেলের জেনেসিস: চ্যপ্টার ৬-৯-এ। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ১৭ লক্ষ প্রজাতির প্রাণী আছে। এদের কয়টিকে নৌকায় ঠাঁই দেওয়া হয়েছিল? বলা হচ্ছে 'সর্বপ্রকার জোড়ার দুটি’ করে। অর্থাৎ তিন তলা ডেক ও নিচের কুঠরী বিশিষ্ট ৩০০ কিউবিট (হাত) দীর্ঘ, ৫০ হাত প্রশস্ত এবং ৩০ হাত উচ্চতার নৌকায় লক্ষাধিক প্রজাতির প্রাণীর জোড়ায় জোড়ায় স্থান সংকুলান যে কী পরিমাণ অবাস্তব, তা যে কোনো সুস্থ চিন্তার পাঠক অনায়াসেই বুঝতে পারেন। এ বিষয়ে ধর্মকারীতে বিভিন্ন সময়ে অনেক শিক্ষণীয় ভিডিও (সাকুল্যে ৮ মিনিট) প্রকাশিত হয়েছে।
[কনুই থেকে মধ্যমাঙ্গুলির অর্গভাগ পর্যন্ত এক কিউবিট (হাত) =প্রায় ১৮ ইঞ্চি]।
২০) এ সত্যগ্রন্থ পূর্ববতী গ্রন্থ সমূহের সত্যায়নকারী!
৫:৪৮ - আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি সত্যগ্রন্থ, যা পূর্ববতী গ্রন্থ সমূহের সত্যায়নকারী এবং সেগুলোর বিষয় বস্তুর রক্ষণাবেক্ষণকারী। অতএব, আপনি তাদের পারস্পারিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ্ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করুন এবং আপনার কাছে যে সৎপথ এসেছে, তা ছেড়ে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না। আমি তোমাদের প্রত্যেককে একটি আইন ও পথ দিয়েছি। যদি আল্লাহ্ চাইতেন, তবে তোমাদের সবাইকে এক উম্মত করে দিতেন, কিন্তু এরূপ করেননি-যাতে তোমাদেরকে যে ধর্ম দিয়েছেন, তাতে তোমাদের পরীক্ষা নেন। অতএব, দৌড়ে কল্যাণকর বিষয়াদি অর্জন কর। তোমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। অত:পর তিনি অবহিত করবেন সে বিষয়, যাতে তোমরা মতবিরোধ করতে।
২১) অন্যান্য
এ ছাড়াও মুহাম্মদের ব্যক্তি-মানস জীবনীগ্রন্থের পাতায় পাতায় যে অসংখ্য 'নো সেন্স ও ননসেন্স' বাণী আছে, তার অল্প কিছু উদাহরণ প্রথম (আকাশ তত্ত্ব), দ্বিতীয় (আকাশ ও পৃথিবী তত্ত্ব), তৃতীয় (ভূ-তত্ত্ব), চতুর্থ (মানব-তত্ত্ব), পঞ্চম (দেহ-তত্ত্ব), ষষ্ঠ (ভ্রূণ-তত্ত্ব), সপ্তম (গোবর-তত্ত্ব) ও ত্রয়োদশ (উদ্ভট তত্ত্ব) পর্বে আলোচিত হয়েছে।
>>> পাঠক, আসুন আমরা ৫:৪৮ বাণীটিকে মনোযোগের সাথে পর্যালোচনা করি। এ বাণীটির প্রথম অংশে বলা হচ্ছে, “(কুরান) সত্য গ্রন্থ, যা পূর্ববর্তী গ্রন্থ সমূহের সত্যায়নকারী এবং সেগুলোর বিষয় বস্তুর রক্ষণাবেক্ষণকারী।” মুহাম্মদের এই উদ্ধৃতিটি তাঁর সময়ের মত আজকেও সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়! বিশেষ করে কোনো ইহুদী/ খ্রিষ্টানদের সাথে আলাপ ও বিতণ্ডার সময়। এই উদ্ধৃতিটি দিয়ে ইসলাম বিশ্বাসীরা প্রমাণ করতে চান যে, তাঁরা ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের ধর্ম এবং তার প্রবর্তক মুসা ও ঈসাকে সমর্থন করেন। আসলেই কি ব্যাপারটা তাই? কুরান সাক্ষ্য দেয় যে, অবিশ্বাসীরা মুহাম্মদকে তাঁদের ধর্মগ্রন্থে রচিত গল্প-কাহিনীর প্রচারকে 'জালিয়াতি' (Forgery) আখ্যা" দিয়েছিলেন। বারবারই তাঁরা অভিযোগ করেছেন যে, মুহাম্মদের এ গল্পগুলোর আদি উৎস তাঁদের ধর্মগ্রন্থে রচিত গল্প-কাহিনী ও পূর্ববর্তীদের উপকথা বৈ আর কিছুই নয়। আমরা এও জানি যে, মুহাম্মদের সময় মক্কায় 'ওকাজ মেলায়' বিভিন্ন ধর্মের লোকেরা এসে কবিতা প্রতিযোগিতার আসর করতো, তাদের ধর্মের গুণগান জনগণকে অভিহিত করাতো। মুহাম্মদ বেশ কয়েকবার তাঁর চাচা আবু তালেবের সাথে ব্যবসার উদ্দেশ্যে সিরিয়া ও অন্যত্র ভ্রমণ করেছিলেন, যেখানকার অধিবাসীদের অধিকিংশই ছিলেন খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাম্বলী। সেখান থেকে মুহাম্মদ তাদের ধর্মের গল্প-গাঁথা শোনেননি, এমনটি ভাবার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই।
মুহাম্মদ ৪০ বছর বয়সে তাঁর ধর্মপ্রচার শুরু করেন। তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাবঞ্চিত ছিলেন, কিন্তু অন্ধ-বধির কিংবা মানসিক প্রতিবন্ধী ছিলেন না। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের মতই শিশু, শৈশব, কৈশোর ও যৌবনসহ সুদীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময়ে বিভিন্ন উৎস থেকে তিনি ধর্মজ্ঞান আহরণের সুযোগ পেয়েছিলেন। সম্ভ্রান্ত বিদুষী ধনাঢ্য খাদিজাকে বিয়ে করার পর নিজ স্ত্রী খাদিজা, খাদিজার চাচাতো ভাই ওয়রাকা বিন নওফল (বাইবেলে বিশেষজ্ঞ ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টান) ও অন্যান্যের কাছ থেকেও তিনি বিবিধ ধর্মবিষয়ে জ্ঞানার্জনের সময় পেয়েছেন নিরবচ্ছিন্ন ১৫ টি বছর (৬৯৫-৭১০ সাল) । তাই মুহাম্মদের প্রচারযন্ত্রে সেই সব ধর্মের গল্প-গাঁথার বর্ণনা থাকবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যা হলো, মুহাম্মদ যখন এই সত্যটিকে অস্বীকার করে প্রচার করতে শুরু করলেন যে, তার বাণীর উৎস ঐশ্বরিক। বাণী ঐশ্বরিক হলে কেন তিনি পূর্ববর্তী ধর্ম-গ্রন্থগুলোরই বাণী এবং পুরাকালের উপকথাগুলোই ইনিয়ে-বিনিয়ে "ঐশী প্রাপ্ত" আখ্যা দিয়ে নিজের নামে প্রচার করছেন? এমনতর অভিযোগের জবাবেই আত্মপক্ষ সমর্থনে মুহাম্মদকে বলতে হয়েছিল, "যা পূর্ববর্তী গ্রন্থ সমূহের সত্যায়নকারী।" এর পরেও সমস্যার শেষ হয়নি। মুহাম্মদের প্রচার ও আদি গ্রন্থের গল্প ও শিক্ষার মধ্যে যখনই কোনো 'ব্যতিক্রম/গরমিল’ হয়েছে, তখন অবিশ্বাসীরা আবার প্রতিবাদ করেছে, "পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহের সত্যায়নকারী হলে তোমার প্রচার ও আমাদের গ্রন্থের বর্ণনা ও শিক্ষার মধ্যে পার্থক্য কেন? সত্যায়নকারী গ্রন্থে (কুরান) কী কারণে এত গরমিল?" এমনতর গুরুতর অভিযোগের জবাবে মুহাম্মদ (আল্লাহ) আত্মপক্ষ সমর্থনে জবাব দিয়েছিলেন যে, "তারা তাদের কিতাব বিকৃত করেছে।"
বিচার মানি, তবে তাল গাছ আমার - প্রবাদটির উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো প্রবক্তা মুহাম্মদের এই ঘোষণাটি। মুহাম্মদ দাবি করেছিলেন, তিনি শুধু সঠিকই নন, তাদের সে বিকৃত বিষয়বস্তুর রক্ষণাবেক্ষণকারীও।
পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহের সাথে মুহাম্মদের বাণীর (কুরান) পার্থক্য হওয়াটা ছিল খুবই স্বাভাবিক। কারণ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাবঞ্চিত মুহাম্মদ বিভিন্ন উৎস থেকে যে-ধর্মজ্ঞান আহরণ করেছিলেন, তা ছিল মুখে-মুখে ও শুনে শুনে। লিখতে-পড়তে না জানার কারণে তৌরাত-বাইবেলের বিভিন্ন ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণের অধিকাংশই ছিল তাঁর অজানা। তাছাড়া স্মৃতি যত প্রখরই হোক না কেন, তা কখনোই শতভাগ শুদ্ধ নয়। বিচার তাঁকে মানতেই হবে। কারণ তাঁর প্রচারের বিষয়বস্তু পূর্ববর্তী গ্রন্থগুলোরই অনুকরণ। আর তাল গাছ তাকে পেতেই হবে। কারণ তা না হলে “এতো আয়োজন" কিসের জন্য! তাই প্রবক্তার এই বাণীটি দিয়ে যারা প্রমাণ করতে চান যে, ইসলাম ইহুদী, খ্রিষ্টান বা অন্য কোনো ধর্ম বা ধর্মপ্রচারককে বৈধতা দিয়েছেন, তাঁরা নিঃসন্দেহে ভ্রান্ত। ইসলামের দৃষ্টিতে একমাত্র সত্য হলো "মুহাম্মদ এবং তার বাণী (কুরান)।" বাকি সমস্তই "ইসলামী রাজনীতি।"
দ্বিতীয় অংশে বলা হচ্ছে, "...কিন্তু এরূপ করেননি - যাতে তোমাদেরকে যে ধর্ম দিয়েছেন, তাতে তোমাদের পরীক্ষা নেন।" কিসের পরীক্ষা? পাঠক, আপনি পৃথিবীর যেখানেই থাকুন না কেন, আপনার পরিপার্শ্বে তাকিয়ে দেখুন তো, ক'জন লোক স্বাভাবিক পরিবেশে তাদের পিতৃপুরুষের ধর্ম পরিত্যাগ করে ধর্মান্তরিত হয়েছেন? আপনি যে বয়সেরই হন না কেন, মনে করে দেখুন তো, এমন 'ধর্মান্তরিত' ক'জন লোককে আপনি চাক্ষুষ দেখেছেন? আপনার জবাবের সাথেই উক্ত বাণীর অসারতা জড়িত। জোর জবরদস্তিহীন স্বার্থবহির্ভূত স্বাভাবিক পরিবেশে ধর্মান্তরিতের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য। এটাই যদি বাস্তবতা হয়, তবে মুসলমানদেরকে মনোনীত ধর্ম পরিবারে জন্মগ্রহণ করিয়ে অত্যন্ত সহজ পরীক্ষা এবং অবিশ্বাসীদের অমনোনীত ধর্ম পরিবারে জন্মগ্রহণ করিয়ে অত্যন্ত কঠোর পরীক্ষার গল্প অবাস্তব ও অযৌক্তিক। এই বাণীটি অমুসলিমদের বিশ্বাস নিয়ে রসিকতা বৈ আর কিছুই নয়।
একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানের আলোকে আজ আমরা নিশ্চিতরূপে জানি যে, ৯৩০০ কোটি আলোক-বর্ষ পরিবৃত দৃশ্যমান এই মহাবিশ্বের (ভিডিও - ২০ মিনিট দীর্ঘ) আদৌ কিনা সৃষ্টিকর্তা আছেন, এমন প্রমাণ কখনোই ছিল না, আজও নেই। মুহাম্মদ তাঁর মনের মাধুরী মিশিয়ে যে স্রষ্টাকে সৃষ্টি করেছিলেন, তা তাঁরই নিজস্ব মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ! প্রকৃতির কাছে অসহায় এবং সীমাবদ্ধ জ্ঞানের অধিকারী আমাদের পূর্বপুরুষদের তৈরি ‘কল্পনার’ ঈশ্বরকে নিয়ে অনেক বাণিজ্য স্বঘোষিত নবী, অবতার এবং তাঁর সংঘবদ্ধ চেলারা যুগে যুগে করে এসেছেন। এখনো করছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন। কারণ এ বাণিজ্যে শুধুই লাভ। কোনোই লোকসান নেই। এ ব্যবসার পুঁজি হচ্ছে মানুষের অসহায়ত্ব ও অজ্ঞানতা। যা চিরকাল আছে এবং থাকবে। স্বঘোষিত নবী ও অবতাররা অসহায় মানুষের সেই কল্পিত ঈশ্বরকে তাদের নিজেদেরই মনের মাধুরী মিশায়ে শ্লোক রচনা করে নাম দিয়েছেন ধর্মগ্রন্থ। তাঁদের নিজ নিজ চিন্তা-ধারাকে ঈশ্বরের বাণী বলে চালিয়েছেন অসহায় বোকা সাধারণ জনগণকে নিয়ন্ত্রণের সুবিধার্থে। শাসকদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতায়। তাই ধর্মগ্রন্থের ঈশ্বরপক্ষপাতদুষ্ট সেই সব মানুষেরই প্রতিনিধিত্বকারী “মানুষ-ঈশ্বর।” তাঁদের সে ভুয়া ঈশ্বর এতটাই হাস্যকর যে, সেই ঈশ্বরকে ১৩৫০ কোটি বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে ‘সেই স্পেশাল নবী/অবতারকে পৃথিবী নামক অতিশয় ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র (ভিডিও - ৯.৫ মিনিট দীর্ঘ) স্থানে জন্মানোর অপেক্ষায়, ধর্মপ্রচার ও ধর্মগ্রন্থ লেখার অপেক্ষায়! সে রকম এক বা একাধিক মানুষের রচিত কেতাবই হলো মুসলমানের কুরান, খ্রিষ্টানের বাইবেল, ইহুদীদের তৌরাত, হিন্দুদের বেদ ইত্যাদি। বলাই বাহুল্য, ধর্মগ্রন্থের এই ঈশ্বরের সাথে এই ম্যাগনিফিসেন্ট বিশ্বস্রষ্টার (যদি থাকে) কোনোই সম্পর্ক নেই।
প্রচলিত ধর্মগুলির ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত ঈশ্বরের জন্মকাল, বোধ করি, সাত হাজার বছরের বেশি নয়। কিন্তু প্রকৃতির কাছে অসহায় এবং সীমাবদ্ধ জ্ঞানের অধিকারী আমাদের পূর্বপুরুষরা এর বহু হাজার বছর পূর্বেই (আনুমানিক ৩৫-৪০ হাজার বছরের বেশি) ঈশ্বরকে কল্পনা করেছিলেন। তাঁদের সেই কল্পনার মূলে ছিল অজ্ঞানতা, অসহায়ত্ব ও বেঁচে থাকার আকুতি। আমাদের পূর্বপুরুষরা তাঁদের সেই কল্পিত ঈশ্বরের ওপর ভরসা করেছেন অনিশ্চিত দৈনন্দিন জীবনের দুরবস্থা থেকে বাঁচার সহায়ক শক্তি জ্ঞানে। এ ছাড়া তাঁরা আর কীই বা করতে পারতেন! প্রকৃতির বিরূপ রুদ্র রোষের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার কিছুই যখন তাদের জানা ছিল না, জানা ছিল না প্রকৃতির বিরূপতাকে অতিক্রম করার কোনো কৌশল, সে মুহূর্তে সেই কল্পনার ঈশ্বরই ছিল তাদের যাবতীয় আশা ভরসার স্থল। বেঁচে থাকার অবলম্বন! সেই পূর্বপুরুষদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি এবং শ্রদ্ধা চিরকালই থাকবে। প্রকৃতির বৈরী প্রতিকূলতাকে তারা অতিক্রম করতে পেরেছিলেন বলেই আমরা আজ এখানে! কিন্তু যারা একবিংশ শতাব্দীর জ্ঞান-বিজ্ঞানের পূর্ণ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ও বিজ্ঞানের অপব্যাখা করে ধর্মবাণিজ্য যুগ যুগ ধরে টিকিয়ে রাখার ব্রতে ব্রতী, তাদের জন্য দুঃখই হয়।
[কুরানের উদ্ধৃতিগুলো সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ (হেরেম শরীফের খাদেম) কর্তৃক বিতরণকৃত বাংলা তরজমা থেকে নেয়া; অনুবাদে ত্রুটি-বিচ্যুতির দায় অনুবাদকারীর। কুরানের ছয়জন বিশিষ্ট অনুবাদকারীর পাশাপাশি অনুবাদ এখানে।]
(চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন